৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতা অভ্যুত্থানের খলনায়ক জিয়া। এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি আরও বলেন, যারা জিয়াউর রহমান বা খালেদ মোশারফের পক্ষে সাফাই গাইছেন তারা কার্যত সংবিধান লঙ্ঘন, অবৈধ ক্ষমতা দখল ও সামরিকতন্ত্রের পক্ষেই সাফাই গাইছেন।
রোববার সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন ইনু।
৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতা অভ্যুত্থানের মহানায়ক কর্নেল আবু তাহের ও খলনায়ক জিয়া উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘সামরিক অফিসারদের ক্ষমতা দখল-পাল্টা দখলের খেলায় (ক্যু) ৩ নভেম্বর আরেক উচ্চাভিলাসী সামরিক অফিসার খালেদ মোশাররফ ক্যু করে ক্ষমতা দখল করে। খালেদ মোশাররফ তার নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সামরিক শাসন জারি করে এবং পাকিস্তানপন্থি বিচারপতি সায়েমকে রাষ্ট্রপতি বানায়। শুধু তাই না খালেদ মোশাররফ খুনী মোস্তাককে গ্রেপ্তার না করে বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার খুনীদের সমঝোতার মাধ্যমে নিরাপদে দেশ ত্যাগের সুযোগ করে দেয়।
‘ক্ষমতালিপ্সু সামরিক অফিসারদের এই বিশৃঙ্খলায় সৃষ্ট চরম রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তা থেকে দেশকে বাঁচাতে, ক্যান্টনমেন্টগুলোতে খুনাখুনী-রক্তারক্তি বন্ধ করতে, সংবিধান লঙ্ঘন-অবৈধ ক্ষমতা দখল-হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করে দেশে সাংবিধানিক ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে এবং ঔপনিবেশিক আমলের গণবিরোধী ব্যবস্থার পরিবর্তন করার লক্ষ্যে উচ্ছৃংখল অফিসারদের বিরুদ্ধে সিপাহীদের সুশৃংখল বিদ্রোহে কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের নেতৃত্বে জাসদ সমর্থন দিয়েছিল,’ যোগ করেন ইনু।
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চাভিলাসী সামরিক অফিসাররা সংবিধান লঙ্ঘন করে চলছিল। এর বিপরীতে ৭ নভেম্বর সিপাহীরা সংবিধান সমুন্নত রাখার প্রচেষ্টা নিয়েছিল। কিন্তু জিয়া বিশ্বাসঘাতকতা করে জাসদ, কর্নেল তাহের ও সিপাহীদের এই প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করে দেয়। জিয়া নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পাকিস্তানপন্থীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানের ট্রেনে উঠে যায় এবং দেশকে পাকিস্তানপন্থার দিকে ঠেলে দেয়।’
জাসদ সভাপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকেই ক্ষমতালিপ্সু উচ্চাভিলাসী সামরিক অফিসাররা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে সেনাবাহিনীকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলেছিল। ক্ষমতালিপ্সু এই উচ্চাভিলাসী সামরিক অফিসাররা সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ও চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বাসাবাড়ি ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে উঠাবসা করতো। সাধারণ সিপাহীরা নয়, এই ক্ষমতালিপ্সু উচ্চাভিলাসী সামরিক অফিসাররাই সেনাবাহিনীর ভিতরে রাজনীতিকরণ ও রাজনৈতিক বিরোধের সূত্রপাত করেন। এই উচ্চাভিলাসী সামরিক অফিসারদের একটি গ্রুপ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে।’
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।