‘স্বামী’ একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি ও নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার স্কুলশিক্ষক খাইরুন নেছা সুমি।
তবে সুমি যাকে স্বামী দাবি করেছেন সেই জুবায়ের রহমান দাবি করেছে, অনেক আগেই তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়ে গেছে।
সুমি কালাই উপজেলার বিনইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। জুবায়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে সাতক্ষীরায় কর্মরত।
জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলনে সুমি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার রান্ডিলা-বাহাদুর গ্রামের জুবায়ের রহমানের সঙ্গে ১৬ লাখ টাকার দেনমোহরে আমার বিয়ে হয়। সে সময় জুবায়ের বেকার ছিলেন। তিনি (জুবায়ের) চাকরি প্রার্থী থাকায় দুজনে বগুড়াতে একটি সাবলেট বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।’
সুমি অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি সন্তানসম্ভবা হলে স্বামীর ইচ্ছায় ভ্রূণ নষ্ট করি। এর পর আমি বাবার বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বিনইল গ্রামে বসবাস শুরু করি।
‘জুবায়ের পরে কাস্টমসে চাকরি পেলে আমার সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের জন্য ছলচাতুরি শুরু করেন। তবে ১৬ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য থাকায় কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি। এক পর্যায়ে জুবায়ের তার বাড়িতে ঘর তৈরির জন্য ঋণ নেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে বেশকিছু কাগজপত্রে সই নেন।’
বক্তব্যের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সুমি বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের চেকবই থেকে আমার সই করা ছয়টি চেক চুরি করেন জুবায়ের। পরে তার ভগ্নিপতি দেলোয়ার হোসেনকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ আমালি আদালতে ১২ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা করেন। একইসঙ্গে চুরি করা চেক দিয়ে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন জুবায়ের।’
হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে জুবায়ের সুমির বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের আদালতে আরেকটি মামলার করেন বলেও অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এরই মধ্যে জুবায়ের গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সুমি বলেন, ‘বিয়ের খবর পেয়ে গত বছর আমি জুবায়েরের বিরুদ্ধে মোহরানা আদায়ের একটি মামলা করি। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগেও মামলা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগ এনে জুবায়ের যে মামলা করেছেন সেই মামলা সাক্ষীকে (নবীর হোসেনকে) দিয়ে তিনি আমার নামে গত ১৮ অক্টোবর ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে একটি প্রতারণার মামলা করিয়েছেন। ওই মামলায় পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন পাই।’
জুবায়ের আরও মামলা করার ভয় দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। সুমি বলেন, ‘এ অবস্থায় নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আমি শঙ্কিত।’
সংবাদ সম্মেলনে সুমির বাবা আজগর আলী উপস্থিত ছিলেন।
সুমির অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে জুবায়ের রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সুমিকে আমি বিয়ে করি। সে সময় দেনমোহর করা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। টেম্পারিং করে সেই টাকার পরিমাণকে ১৬ লাখ করা হয়। আমি ব্ল্যাকমেইলের শিকার।’
সুমিকে হুমকি বা ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ নাকচ করে জুবায়ের বলেন, ‘গত বছরের জুলাইয়ে আমি তাকে ডিভোর্স (তালাক) দিয়েছে। তালাকনামায় তার সই আছে। আমার বিরুদ্ধে করা মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে আমি উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছি।’