ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে বাসের পর এবার বাড়ানো হলো লঞ্চের ভাড়া। বাসের ভাড়া যে হারে বাড়ানো হয়েছে, লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হলো তার চেয়ে বেশি।
সরকার দূরপাল্লার বাস ভাড়া বাড়িয়েছে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত।
রবিবার বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর নৌপরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ’র মতিঝিলের কার্যালয়ে লঞ্চ মালিকদের নিয়ে বৈঠক শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক।
বৈঠকে লঞ্চমালিকরা দ্বিগুণ হারে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। তবে বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৭টার পর জানানো হয়, ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর যাত্রাপথ ১০০ কিলোমিটারের বেশি হলে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ১ টাকা ৪০ পয়সার জায়গায় হবে ২ টাকা।
লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গোলাম সাদিক বলেন, দীর্ঘ আট বছর পর সরকারের নির্দেশে আমরা নতুন ভাড়া নির্ধারন করতে পেরেছি। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যাত্রী ও মালিক কোনো পক্ষেরই যেন সমস্যা না হয় সেদিক বিবেচনা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
গোলাম সাদিক বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে আলোচনা হলেও সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর ভাড়া বাড়ানোর দাবি জোরালো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মালিকদের সঙ্গে গত পরশু বৈঠক করেছি। সেখানে আলোচনার প্রস্তাবের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণ করেছি।’
বৈঠকে বলা হয়, লঞ্চ মালিকরা রোববার রাত থেকেই লঞ্চ চালাবেন। রাত ১০টা থেকে যেসব লঞ্চ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাবে তারা রাতেই যাত্রা করবে। আর কোনো লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কীর্ত্তনখোলা লঞ্চের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠক শেষে বলেন, করোনার সময় আমরা যে লোকসান দিয়েছি তাতে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা আবশ্যক ছিল। পাশাপাশি এখন আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা আরও ২৩ শতাংশসহ মোট ৮৩ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম। যদিও আমাদের পক্ষ থেকে শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর দাবি ছিল। লোকসান পোষানোর জন্য ভাড়া ৮৩ শতাংশ না বাড়ালেই নয়-এমন অবস্থা ছিল।
তিনি বলেন, এখন সরকারের পক্ষ থেকে যে ভাড়া বেধে দেয়া হয়েছে সেটিও আমাদের জন্য যে খুব খারাপ হবে তা নয়; তবে করোনার সময় যে লোকসান হয়েছে সেটি উঠানো কঠিন হবে।
গত বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন থেকে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বন্ধ করে দেন মালিকরা। শুক্রবার শুরু হয় সড়ক পরিবহন ধর্মঘট। শনিবার থেকে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার প্রথমে বাসমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সড়ক খাতে পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আসে বাস ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা।
এরপর লঞ্চের ভাড়া নিয়ে শুরু হয় বৈঠক। ঘণ্টা চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে লঞ্চের নতুন ভাড়া ঘোষণা করা হয়।