দেশে আবাসন চাহিদার ঊর্ধ্বমুখী গতির সঙ্গে গৃহনির্মাণ ঋণ সরবরাহে সমন্বয় আনতে যাচ্ছে সরকার উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এ লক্ষ্যে গৃহনির্মাণ ঋণ বিতরণকারী সংস্থা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) মূলধনের পরিমাণ বাড়ানো হবে কমপক্ষে ৭ গুণ।
যাত্রা শুরুর সময় বিএইচবিএফসির অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ ছিল ১১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১১০ কোটি টাকা। এখন তা বাড়িয়ে অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
রোববার বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ঋণের কিস্তি সোনালি ই-সেবার মাধ্যমে অনলাইনে জমা ব্যবস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ তথ্য দেন।
রাজধানীর হোটেল পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালের দিলকুশা হলে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী জানান, গৃহনির্মাণ ঋণের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সমন্বয়ে যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি আইন জাতীয় সংসদে উত্থাপনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আশা করা যায়, আইনটি পাস হলে বিএইচবিএফসির মূলধন কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাবে।’
উল্লেখ্য, বিএইচবিএফসির ঋণের কিস্তি অনলাইনে জমা ব্যবস্থার উদ্বোধনের ফলে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের কিস্তিসহ সব রকম বিক্রয়যোগ্য ফরমের মূল্য ও সরকার নির্ধারিত ফি-এর অর্থ এখন যেকোনো স্থান থেকে তাৎক্ষণিক পরিশোধ করা যাবে।
এখন সোনালী ব্যাংক লি. (এসবিএল)-এর সোনালী ই-সেবা পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে গ্রাহকের নিজ অ্যাকাউন্টের টাকা স্থানান্তর, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড অথবা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে এ জমা সম্পন্ন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
জমা পরবর্তীতে জমাকৃত অর্থের তথ্য এবং বিদ্যমান ঋণ স্থিতির তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে অটো জেনারেটেড ভাউচার এবং এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহক জানতে পারবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে মানসম্মত বাসস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত গৃহহারা মানুষের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে তিনি গুচ্ছগ্রাম পরিকল্পনা হাতে নেন। সংবিধানে মানুষের সকল মৌলিক চাহিদা ও অধিকার ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত করেন। পাশাপাশি এ চাহিদা পূরণ এবং অধিকারের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তিনি কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
‘বঙ্গবন্ধু গৃহনির্মাণে সরকারি পর্যায়ে ঋণসহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন পুনর্গঠন করেন। এ ছাড়া তিনি গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাসস্থান সংস্থানের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করেন।’
অর্থমন্ত্রী জানান, ‘এখন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার গৃহ পরিকল্পনা অনুসরণ করে তা বাস্তবায়নে যুগান্তকারী সব উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করেছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বস্তিবাসীদের জন্য স্বল্পমূল্যে ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহঋণ, গৃহহীন জনসাধারণের জন্য আশ্রয়নসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য গৃহঋণের সংস্থান করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘মুজিব বর্ষে আমাদের লক্ষ্য, একজন মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না।’
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ঋণ সহজীকরণের পথে সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ব্যবসায়িক অর্জন নির্দেশক সব সূচকে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। আশা করছি সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। উপযুক্ত গ্রাহক নির্বাচন করে ঋণ প্রদান এবং নিয়মিতভাবে ঋণ আদায়ের সাফল্য বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করবে।
‘বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের ঋণের কিস্তি অনলাইনে জমা দেয়ার ব্যবস্থা চালু নিঃসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ। এর ফলে গ্রাহকসেবা সহজ এবং দ্রুততর হবে। সোনালী ই-সেবা পদ্ধতিটি ডিজিটাল বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মে এক অনন্য সংযোজন।’
বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, এসবিএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী এবং বিএইচবিএফসি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বিএইচবিএফসি পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য পরিচালক এবং করপোরেশন ও এসবিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।