জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে বাস-ট্রাকের মতো ধর্মঘট ডেকেছেন লঞ্চমালিকরাও। তাতে প্রতিদিনের মহাব্যস্ত সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে নেমে এসেছে সুনসান নীরবতা। নেই কোনো হইচই, হাঁকডাক।
রোববার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টার্মিনালে দেখা যায়, সেখানে কোনো লঞ্চ নেই। মালিকদের নির্দেশনায় লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও স্টাফরা। সোয়ারীঘাট, বাবুবাজার ৫ নম্বর ঘাট, ফরাশগঞ্জ ঘাট, সদরঘাট লঞ্চঘাট, চাঁদপুর লঞ্চঘাট- এই পাঁচটি ঘাটের লঞ্চগুলো রাখা হয়েছে ফরাশগঞ্জ ও সোয়ারীঘাটে।
পুরো সদরঘাট লঞ্চ এরিয়ায় খুব অল্পসংখ্যক মানুষ দেখা যায়। তবে টার্মিনালের ভেতরে দেখা মেলে দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের। এ সময় বেশ কয়েকজন যাত্রী নিউজবাংলাকে তাদের ভোগান্তির কথা জানান।
ভোলার কাপড়ের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম শনিবার বিকেল থেকে পড়ে আছেন যাত্রী করিডোরে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমগো কথা কেউ ভাবে না। কেমনে যামু, ঝি-পুত লইয়া কেমনে চলমু; কেউ কিচ্চু করে না আমগো লাইগা। তেলের দাম নাকি বাড়ছে, বাইত যাইতে পারতাছি না। হাসিনা কি আমগো কথা ভাববো না?’
গাজীপুর থেকে রফিক সুহাদ নামের এক যাত্রী যাবেন বরিশাল। শনিবার বিকেল ৩টায় এসেছেন ঘাটে। ভেবেছিলেন, হয়তো সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সবকিছু মিটে গেছে। চালু হয়েছে লঞ্চ। কিন্তু না, এসে দেখছেন ভিন্ন চিত্র। চলছে না লঞ্চ। বাস বন্ধ, তাই ফিরতেও পারবেন না। যাত্রী ছাউনিতে অপেক্ষায় কেটে গেছে রাতটা। সকাল থেকে সেই অপেক্ষায়ই আছেন কখন ছাড়বে লঞ্চ আর কবে যাবেন বাড়ি।
সকালে কয়েকটি লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনালে পৌঁছতে দেখা গেছে। এসব লঞ্চ নির্দেশনার আগেই রওনা হয়ে যাওয়ায় সদরঘাটে পৌঁছতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে এসব লঞ্চের যাত্রীরা বলছেন, তাদের কাছ থেকে আগের চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া হয়েছে।
পূবালী-৩ লঞ্চে করে পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসেন জাহেদ আমিন। তিনি বলেন, ১০০০ টাকার ক্যাবিন ভাড়া তার কাছ থেকে নিয়েছে ১৪০০ টাকা। এ ছাড়া ডেকের ভাড়া ৫০-৬০ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে।
অ্যাডভেঞ্চার-৯-এর স্টাফ সাঈদ হাসান নাজিম নিউজবাংলাকে বলেন, সদরঘাট থেকে বরিশালের ভাড়া ২৫৫ টাকা। তেলের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে ভাড়া ৪০০ টাকা করা দরকার।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সদরঘাট থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে না। লঞ্চমালিকরা বন্ধ রেখেছেন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।’
লঞ্চ বন্ধ থাকায় সদরঘাট থেকে চাঁদপুরগামী যাত্রীরা খুঁজে নিয়েছেন বিকল্প উপায়। সদরঘাটের লালকুঠি ঘাট থেকে বাড়তি ভাড়ায় পিকআপ ও প্রাইভেট কারে গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা। পিকআপে প্রতি জনের ভাড়া ৪০০-৭০০ টাকা ও প্রাইভেট কারে ১০০০-১৫০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। তবে এসব পরিবহনের সংখ্যা খুব কম।