বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরিবহন ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে বাজারে আগুন

  •    
  • ৭ নভেম্বর, ২০২১ ১১:২০

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধর্মঘটের কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় নিত্যপণ্যের সরবরাহ কম। আর বিভিন্ন মাধ্যমে কিছু সবজি বাজারে আনা হলেও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প নেই।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জেরে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের তৃতীয় দিন এর চরম প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারেও। বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের দাম। প্রতিটি নিত্যপণ্য কিনতে ক্রেতাকে বাড়তি ৫ থেকে ১০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধর্মঘটের কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় নিত্যপণ্যের সরবরাহ কম। আর বিভিন্ন মাধ্যমে কিছু সবজি বাজারে আনা হলেও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা ছাড়া বিকল্প নেই।

ক্রেতারা বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমে কঠিন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের হিমশিম অবস্থা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সাধারণত শীতের মৌসুমে সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। মাত্র শীতের সবজি বাজারে আসছে। দামও কমের দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে দাম আরও বাড়বে এবং মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।

চড়া সবজির বাজার

রোববার সকালে রাজধানীর কাওরান বাজার, শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। দুই দিন আগে যে বেগুন ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, সেই বেগুন এখন ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধর্মঘটের আগে বাজারগুলোতে শিম বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকায়, একই মানের শিম এখন বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।

যে সাইজের ফুলকপি দুই দিন আগে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাঁধাকপি প্রতিটি আকারভেদে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক দিন আগেও ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।

এ ছাড়া গাজরের কেজি ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টম্যাটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, লাউ ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ো ৬০ টাকা ও করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। কাঁচা মরিচ বাজারভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চড়া পেঁয়াজের দামও। দুই দিন আগে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫০-৫৫ টাকায় পাওয়া গেছে। একই মানের পেঁয়াজ এখন ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আটা, ময়দা, শুকনা মরিচ, আলুসহ বেড়েছে আরও কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েব সাইটে দেয়া তথ্য মতে, প্রতি কেজি প্যাকেট আটায় ৩ টাকা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা ও প্যাকেট ময়দায় ২ টাকা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৪০ টাকায়। এ ছাড়া আলু কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে।

চড়া মাছের দামও

দাম বাড়ার দিকে পিছিয়ে নেই মাছের বাজারও। যেকোনো ধরনের মাছ কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।

বড় আকারের কাতল, রুই ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় পাওয়া গেছে।

কোরাল ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কৈ ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙাশ ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, টোনা ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, আইড় ৩০০ থেকে ৩৫০, টেংরা আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির দাম কমেছে

তবে ব্রয়লার মুরগির দাম সামান্য কমেছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায়। আর লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।

ডিমের দামও কিছুটা কমেছে। ফার্মের লাল ডিম হালিতে ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায়।

ক্রেতা-বিক্রেতারা যা বলছেন

শেওড়াপাড়া বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবজির দামে প্রভাব পড়েছে। তেলের দাম বাড়ায় পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় আসতে আগের চেয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হবে। এই বাড়তি ভাড়া সবজির দামের সঙ্গেই যুক্ত হবে। তাই শীতের ভরা মৌসুমেও সবজির দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’

ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানান, ‘বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি এনে ঢাকার চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবজির সরবরাহ একদম কমে গেছে। এতে করে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন আড়তে থেকে কিছু সবজি বাজারে আনা হলেও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে।’

মাছের আড়তের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ‘গেল দুই দিন মাছ কিনতে তাদেরও বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। তা ছাড়া চাহিদার তুলনায় সরবরাহও কম। বেশি দামে কেনার কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে চড়া দামে। না হলে লোকসান গুনতে হবে।’

বাজারে গিয়ে সবজির দাম শুনে অনেক ক্রেতা সবজি না কিনে ফেরত যাচ্ছেন। খুব প্রয়োজন যাদের, তারা কিনলেও কপালে তাদের চিন্তার ভাঁজ। বলছেন, শীতের সময় বিভিন্ন ধরনের সবজি বাজারে ওঠে। এখন যদি সবকিছু নাগালের বাইরে থাকে তাহলে অন্য সময় অবস্থা কী হবে।

ইব্রাহিমপুর বাজারে বাজার করতে এসে পলাশ আহসান বলেন, ‘বাজারে এলে দাম শুনেই চোখেমুখে যেন অন্ধকার দেখি। সব পণ্যের দাম চড়া। আর একবার দাম বাড়লে আর কখনও কমানো হয় না। অথচ আয়-রোজগার তো বাড়ে না। এ অবস্থায় আরও বাড়লে আমরা সাধারণ মানুষ বাঁচব কীভাবে।’

জোসনা বেগম বলেন, ‘সবকিছু যেন সাধ্যের বাইরে। মাছ-মাংস তো দূরের কথা, প্রতিদিনের চাল-ডাল কিনতেই হিমশিম অবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে আধাপেট খেয়ে বাঁচতে হবে।’

শফিক রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তো দাম বৃদ্ধির জন্য নানা অজুহাত খোঁজে। সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগেও সব পণ্যের দাম চড়া ছিল। এখন তারা ভালো একটা অজুহাত পেল। এই অজুহাতে ব্যবসায়ীরা এখন আরও লাগাম ছাড়া হয়ে যাবে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমে কঠিন হয়ে উঠছে।’

গত বুধবার প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর ফার্নেস অয়েলে বাড়ানো হয়েছে লিটারপ্রতি ৩ টাকা। ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের ওপর।

এ বিভাগের আরো খবর