‘আলোচনা দুই দিন পরে না করে আগে করলে আমাদের এই ভোগান্তি হয় না। ইমার্জেন্সি কোর্ট বসতে পারে আর বিআরটিএ দুই দিন ছুটি কাটিয়ে আজকে বৈঠকে বসেছে। তারা ছুটি কাটায়, আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
সাপ্তাহিক কর্মদিবসের শুরুর দিনে বাস না পেয়ে এভাবে ক্ষোভ দেখান মোহাম্মদপুর বসিলা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকা রুহুল আমিন। সায়েন্স ল্যাবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। থাকেন বসিলা হাউজিংয়ে।
গত বুধবার দেশে জ্বালানি তেল ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ করে বাড়িয়ে দেয় সরকার। এতে প্রতি লিটারে ডিজেলের দাম বাড়ে ১৫ টাকা করে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিকরা। শুক্রবার থেকে সারা দেশে বাস চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। সে ধারাবাহিকতায় শনিবার বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল।
নিউজবাংলাকে রুহুল আমিন বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ানোর আগে মালিক সমিতির লোকজনের সঙ্গে বসে সমন্বয় করে তারপর তেলের দাম বাড়ানো উচিত ছিল। সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে, পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট শুরু করেছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছি আমাদের মতো সাধারণ জনগণ।’
সরকার ও পরিবহন মালিকদের সমন্বয়ের অভাব জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকার ও মালিক সমিতির সমন্বয় করা উচিত। সাধারণত অফিসে যেতে-আসতে বাসে ২০ টাকা লাগে। গতকাল যেতে-আসতে লেগেছে ২০০ টাকা। এ রকম ধর্মঘট আজীবন থাকবে না। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে আমাদের যে তিন দিন জনদুর্ভোগ হলো, এটার কৈফিয়ত কে দেবে।’
সাপ্তাহিক প্রথম কর্মদিবসের সকালে ছিল পথে পথে মানুষের জটলা, গাড়ির জন্য অপেক্ষা আর বাড়তি ভাড়াসহ যানবাহন না পাওয়ার হয়রানি।
অনেকেই গাড়ি পাবেন না জেনে হেঁটেই রওনা হন অফিসে যেতে। কাছাকাছি যাদের, তারা যেতে পারলেও বেশি দূরে যাদের অফিস, তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন।
রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, বসিলা, মিরপুর, উত্তরা, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দলে দলে মানুষ বাস না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হন।
রাস্তায় নেমে প্রায় সবাইকে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। রিকশায় দ্বিগুণ, তিনগুণ, সিএনজি অটোরিকশার ভাড়াও হাঁকছিলেন দ্বিগুণ। উপায় না পেয়ে সে ভাড়াতেই রওনা হন লোকজন।
পরিবহন ধর্মঘটের তৃতীয় দিন রোববার সকালে রাস্তায় নেমে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় দূরের অফিসগামীদের। নগর পরিবহনের বাস গত দুই দিনের মতো আজও রাস্তায় নামেনি।
গত দুই ছুটির দিনে সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও অনেক বেসরকারি চাকরিজীবীদের বের হতে হয়েছে। তাই সকালে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ছিল তাদের ভিড়।
বিআরটিসির কিছু বাস চলতে দেখা গেলেও ভিড়ে তাতে ওঠার উপায় ছিল না। এই সুযোগে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিকশার ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন চালকরা।
এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এই ভোগান্তি আর কতদিন চলবে। কবে শেষ হবে ভোগান্তি।
রাস্তায় চলা বিভিন্ন কোম্পানির পিকআপ ভ্যানে উঠে অফিস যাওয়ার চেষ্টায় মানুষজন। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস
তেলের দাম না কমালে এবং ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত বাস-লঞ্চ ধর্মঘট অব্যাহত রাখার কথা জানান পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
রাজধানীর বেশির ভাগ বাস গ্যাসে চললেও মালিক সমিতির চাপে সেটাও বন্ধ রাখা হয়। এতে রাজধানীর মানুষের জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।
শুক্র ও শনিবার সরকারি সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বিআরটিএর কর্মকর্তারা মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেননি। তারা রোববার বৈঠক করার সময় দেয়।
অফিসে যেতে সকাল থেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা নাবিলা জাহান। অফিস রামপুরা। ছেলে-মেয়েদের স্কুল মোহাম্মদপুরে, তাই মোহাম্মদপুর থেকেই যাতায়াত করেন।
নিউজবাংলাকে নাবিলা বলেন, ‘বাচ্চাদের স্কুল মোহাম্মদপুর হওয়ায় এখান থেকেই অফিস করি। প্রতিদিন অফিসে যেতে বাসভাড়া লাগে ৩০ টাকা। এখন যেতে-আসতে সিএনজিতে লাগে ৬০০ টাকা। তার ওপর রয়েছে সিএনজি পাওয়ার ঝক্কি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় তারা ভাড়া বাড়াতে পারত। এভাবে ধর্মঘট ডাকায় বরং সবারই ক্ষতি হচ্ছে। সরকার ও মালিক সমিতির উচিত একটা সমাধানে আসা।’
কেন্দ্রীয়ভাবে বাসমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি বিআরটিএর কাছে ভাড়া যৌক্তিক হারে বাড়াতে আবেদন করে। সে আবেদনে লেখা ছিল, জেলায় জেলায় বাস মালিকরা বলছেন, বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করলে তাদের লোকসান হবে। তাই তারা বাস চালাবেন না।