বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চীনের বাজারে আরও ৫ বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা চায় বাংলাদেশ

  •    
  • ৬ নভেম্বর, ২০২১ ১৯:৩৭

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এলডিসি থেকে বের হলে যখন শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না, তখন রপ্তানি বাজার নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। ওই অবস্থায় নতুন এবং উদ্ভাবনী পণ্য দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মতো দেশ চীনা বিনিয়োগেই টিকে আছে। বাংলাদেশকেও এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর চীনের বাজারে আরও পাঁচ বছর শুল্কমুক্ত পণ্যের সুবিধা চায় বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে চীনের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেছেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে আমরা চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অতিরিক্ত পাঁচ বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছি। আশা করছি, এ প্রস্তাব সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে চীন।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসে জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা হবে।

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে চীন সরকার বাংলাদেশি পণ্যে আরও পাঁচ বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বেইজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব-উজ্জামান।

তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএন-সিডিপি) সর্বশেষ পর্যালোচনায় এলডিসি থেকে উত্তরণের সব যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ।

এই যোগ্যতা অর্জনের পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধান অনুযায়ী এলডিসি হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। তখন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ এরই মধ্যে সক্ষমতা অর্জনে নানা প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে, তারা ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখবে। অবশ্য বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে আরও ১২ বছর এ সুবিধা চেয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানির বড় একটি অংশ যায় ইউরোপের বাজারে।

চীনও বাংলাদেশের বড় বাণিজ্যের অংশীদার। এজন্য চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। তবে দেশটির সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতিও রয়েছে। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ বিনিয়োগ বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ।

বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলেছেন, বড় বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আরও ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক বন্ধন প্রয়োজন। কেননা বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ চীন।

তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাপকহারে বেড়েছে। আগামীতে এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অর্থনীতির দেশ। ২০২৮ সালে দেশটি এক নম্বর অর্থনীতির দেশ হিসেবে উন্নীত হবে বলে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এ দেশটির প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। উদ্ভাবনী পণ্য, নতুন পণ্য ও প্রযুক্তি পণ্যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এখনও ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘চীন আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যের অংশীদার হলেও দেশটির সঙ্গে রয়েছে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে হলে চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করতে হবে। এটা করা গেলে একদিকে ঘাটতি কমবে। অন্যদিকে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের সামনে যে চ্যালেঞ্জ আসবে সেটি মোকাবিলা করা সহজ হবে।’

গত বছর চীন থেকে বাংলাদেশে ১০২ কোটি ডলার সমপরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, চামড়া, প্লাস্টিক, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও বায়ো ট্যাকনোলজি খাতে বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের উদ্যোক্তারা এসব খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন।’

গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখতে বাংলাদেশের জন্য এফডিআই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি এখন শক্তিশালী। ফলে এ দেশে চীনা বিনিয়োগের এখনই আদর্শ সময়।’

দ্বিপাক্ষিক কার্যক্রম জোরদার করতে বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইর গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে বের হলে যখন শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না, তখন রপ্তানি বাজার নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। ওই অবস্থায় নতুন এবং উদ্ভাবনী পণ্য দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মতো দেশ চীনা বিনিয়োগেই টিকে আছে। বাংলাদেশকেও এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর