জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। এর মধ্যেই ঢাকায় আসেন ফয়সাল আহমেদ। উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া।
শুক্রবার রাতে মিরপুরে আত্মীয়ের বাসায় আসা থেকে শুরু করে শনিবার ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পথে পথে অনেকবার ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বলে জানান এ পরীক্ষার্থী।
ফয়সাল নিউজবাংলাকে জানান, সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হলেও তিনি কেন্দ্রে পৌঁছান সোয়া ১০টায়। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিকশা নিয়ে রওনা হতে হয়। মিরপুর-১০ থেকে ঢাকা কলেজে যেতে ২০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে তাকে।
গণপরিবহন বন্ধ থাকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ পরীক্ষার্থী বলেন, ‘গতকাল ঢাকা আসছি। গাড়িঘোড়া সব বন্ধ ছিল। কখনো সিএনজি, ভ্যান আবার রিকশায়—এভাবে ঢাকায় এসেছি৷’
বর্ধিত ভাড়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। বাস বন্ধ রেখে এমন হয়রানির মানে কী?
‘তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে যদি বাস ভাড়া বাড়াতেই হয়, তাহলে এমন ভোগান্তি সৃষ্টি না করে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করলেই হতো। শুধু শুধু নাগরিক ভোগান্তি ও হয়রানি করে লাভ কী?’
বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেই শনিবার বিকেলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় লঞ্চ মালিক সমিতি।
পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে রাস্তায় নেমে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় পরীক্ষার্থীদের। নগর পরিবহনের বাস দ্বিতীয় দিনেরও রাস্তায় নামেনি।
ছুটির দিনে সরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও বেসরকারি চাকরিজীবীদের বের হতে হয়েছে। সকালে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ছিল তাদের ভিড়।
বিআরটিসির কিছু বাস চলতে দেখা গেলেও ভিড়ে তাতে ওঠার উপায় ছিল না। এই সুযোগে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিকশার ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন চালকরা।
বর্ধিত এ ভাড়ার ভুক্তভোগীদের একজন রাজধানীর বনশ্রীর বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
রাস্তায় ভোগান্তির কথা চিন্তা করে পরীক্ষার দুই ঘণ্টা আগে বাসা থেকে রওনা হন আরিফুল। বনশ্রী থেকে হেঁটে হাতিরঝিল আসেন। প্রায় ৩০ মিনিট পর একটি বিআরটিসি বাস ধরে পল্টন যান।
পরে সেখান থেকে ১০০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে ঢাকা কলেজে পৌঁছান আরিফুল। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঢাকা কলেজে যাওয়া যেত।
‘শুধু শুধু মানুষের এমন দুর্ভোগ করে লাভ কার’, প্রশ্ন এ পরীক্ষার্থীর।
ধর্মঘট থাকায় ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতিও কম ছিল। আরিফুল যে কক্ষে পরীক্ষা দিয়েছেন, সেখানে ৫০ জন বসার আসন থাকলেও পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৫ জন।
ঢাকার সাত কলেজে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন পড়েছিল ৪০ হাজারের বেশি। আবেদনকারীদের একটি বড় অংশকে কেন্দ্রে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
রাজধানীর অনেক জায়গায় ভোগান্তির চিত্র ছিল একই রকম। মালিবাগের বাসিন্দা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমরিন সেতু। শনিবার সকালে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস করতে যান স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়াতে।
তিনি জানান, মালিবাগ থেকে উত্তরা পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যেতে হয়ে। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ক্যাম্পাসে যান। ফেরার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে খিলক্ষেত পর্যন্ত আসেন তিনি। সেখান থেকে অটোরিকশায় বাসায় আসেন।
এ শিক্ষার্থী জানান, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে ২৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়েছে।
সেতু মনে করেন, সরকার চাইলে দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে পারে সংকটের সমাধান।