আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে এবার বেশ বিপদে পড়েছেন চার মহাকাশচারী। প্রায় ছয় মাস মহাকাশে কাটিয়ে তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার সময়টি হতে পারে দুর্বিষহ।
স্পেসএক্সের যে ড্রাগন ক্যাপসুল এনডোভারে করে তাদের ফেরার কথা, সেটির টয়লেট নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে প্রায় ১৮ ঘণ্টার যাত্রায় ডায়াপার পরে থাকতে হবে চার নভোচারীকে।
যুক্তরাষ্ট্রের হথর্নভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্স-এর রকেটসহ অন্যান্য মহাকাশ যানের ওপর বেশ কয়েক বছর ধরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে নাসা। গত কয়েক বছরে মহাকাশে বেশির ভাগ স্যাটেলাইটই পাঠানো হয়েছে স্পেসএক্সের রকেটের সাহায্যে।
ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স গত সেপ্টেম্বরে বেসরকারি পর্যায়ের কয়েকজনকে মহাকাশে পাঠানোর সময়ে তাদের ড্রাগন ক্যাপসুলের টয়লেটে সমস্যা প্রথম ধরা পড়ে। সেটি পৃথিবীতে ফিরে আসার পর দেখা যায়, টয়লেটের সঙ্গে যুক্ত একটি পাইপ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে ক্যাপসুলের মেঝে পর্যন্ত গড়িয়ে এসেছে মূত্র।
এরপর সংস্থাটি তাদের সব ড্রাগন ক্যাপসুল সংস্কার করলেও এনডোভারে আবার একই সমস্যা ধরা পড়েছে। এই এনডোভারে করেই গত এপ্রিলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান নাসার শেন কিমব্রো ও মেগান ম্যাকআর্থার, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির থমাস পেসকাট এবং জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির আকিহিকো হোশিদে।
নিউজউইকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকার পর রোববার তারা পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা হতে পারেন। তবে এর মধ্যে এনডোভারের টয়লেটের ত্রুটি সারানো না গেলে যাত্রাপথে শিশুদের মতোই ডায়াপার পরে থাকতে হবে চার নভোচারীকে।
বিষয়টি নিয়ে অবশ্য বাড়তি ভাবনা মাথায় নিচ্ছেন না মহাকাশচারীরা। টিমের সদস্য মেগান ম্যাকআর্থার যেমনটি মহাকাশ স্টেশন থেকে গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘ফিরতি পথে আমরা ড্রাগনের টয়লেট ব্যবহার করতে পারব না, তবে এটি নিয়ে বেশি না ভেবে তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে ফেরাটাই গুরুত্বপূর্ণ।
‘আমরা যখন বাড়ির পথ ধরব, তখন ড্রাগনকে ভালোভাবে পরিচালনা করার দিকেই আমাদের বেশি নজর থাকবে। এ বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মহাকাশ ফ্লাইট অনেক ছোট ছোট চ্যালেঞ্জে ভরপুর। টয়লেটে সমস্যা এমনই একটি ঘটনামাত্র। আমরা এটি নিয়ে তেমন চিন্তিত নই।’
এ ধরনের টয়লেট রয়েছে স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে
মহাকাশবিষয়ক সংবাদ মাধ্যম স্পেস ডটকমের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৪ মিনিটে চার নভোচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে পৃথিবীর দিকে যাত্রা করবেন। সব ঠিক থাকলে তাদের ক্যাপসুল ‘এনডোভার’ আটলান্টিক মহাগরের বুকে আছড়ে পড়বে সোমবার সন্ধ্যায়। এরপর সেই ক্যাপসুল থেকে তাদের নিয়ে আসা হবে উপকূলে।
চার নভোচারীকে ফিরিয়ে আনতে স্পেসএক্স গত শনিবার আরেকটি ড্রাগন ক্যাপসুল পাঠানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। তবে আবহাওয়াজনিত কারণসহ আরও কিছু জটিলতায় এটি যাত্রার সময় দুই দফা পিছিয়েছে। বলা হচ্ছে, আগামী বুধবারের আগে এটি পাঠানো সম্ভব হবে না।