বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাস ধর্মঘটে ট্রেনে ‘ঈদের চাপ’

  •    
  • ৬ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:৫৭

কমলাপুর রেল স্টেশন গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের প্রবেশ মুখেই হাজারো যাত্রীর জটলা। বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে বাস না পেয়ে তারা এখানে ছুটে এসেছেন। প্রত্যেকটি ট্রেন যাত্রীতে টইটম্বুর। অতিরিক্ত বগি লাগিয়েও সামাল দেয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটে দূর যাত্রার মানুষের প্রধান ভরসায় পরিণত হয়েছে ট্রেন। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনও রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। যেন ঈদের চাপ!

কমলাপুর রেল স্টেশন গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের প্রবেশ মুখেই হাজারো যাত্রীর জটলা। বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে বাস না পেয়ে তারা এখানে ছুটে এসেছেন। প্রত্যেকটি ট্রেন যাত্রীতে টইটম্বুর। অতিরিক্ত বগি লাগিয়েও সামাল দেয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি।

স্টেশনে প্রবেশ মুখে হাতে জরিমানার রশিদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন টিটিরা। টিকিট না থাকায় সেই জরিমানার রশিদে ভাড়ার টাকা সংগ্রহ করে যাত্রীদের ভ্রমণ করার সুযোগ করে দিচ্ছেন তারা। নির্দিষ্ট গন্তব্যের ট্রেন এলে যাত্রীদের ডেকে নিচ্ছেন রেলের কর্মচারীরা। এরপর ভাড়া পরিশোধ করে যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ করছেন।

জরিমানার রশিদে ভাড়ার টাকা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশনের টিটি আবু তালেব বলেন, ‘সব কাউন্টার বন্ধ। আর মানুষের যে চাপ তাতে এত টিকিট দেয়া সম্ভব না। তাই আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এই সংকট সামাল দেয়ার জন্য। ট্রেনে জরিমানা করার জন্য যে স্লিপ ব্যবহার করি সেটাই টিকিট হিসেবে যাত্রীদের দিয়ে দিতে বলা হয়েছে। আমরা সেই কাজটাই করছি।’

যারা এভাবে টিকিট কাটছেন তাদের সিট দেয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতো সিট কীভাবে দেয়া যাবে? যাত্রীরা কাউন্টার থেকে যে স্ট্যান্ডিং টিকিট করতো সেটাই আমরা এই স্লিপের মাধ্যমে দিচ্ছি।’

কথা হয় কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের কারণে যাত্রীদের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। সারা বছরে একমাত্র ঈদের সময় আমরা এমন চাপের সম্মুখীন হই। শুক্রবার আরও বেশি চাপ ছিল। ট্রেনে দরজায় ঝুলে মানুষ যাচ্ছে।

‘আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছি। তাদের এত টিকেট দেয়া সম্ভব না। তাই জরিমানার রশিদেই ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই আমরা অতিরিক্ত বগি যুক্ত করে দিয়েছি।’

কমলাপুরের যাত্রীদের অধিকাংশই পরীক্ষার্থী। শুক্রবার-শনিবার ঢাকায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা। দেশের প্রায় সব জেলা থেকে পরীক্ষার্থীরা এসেছেন সেসব পরীক্ষায় অংশ নিতে। বাস বন্ধ থাকায় তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে রাজশাহী থেকে শুক্রবার রাতে ট্রেনে করে ঢাকায় এসেছেন শিশির। তার চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

নিউজবাংলাকে শিশির বলেন, ‘আমি খুবই ক্লান্ত। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আসতে বাসের টিকিট কাটা ছিল, কিন্তু ধর্মঘটের কারণে গতকাল রাতে ট্রেনে করে রওনা হয়েছি। সিট পাইনি, পুরো রাস্তা দাঁড়িয়ে এসেছি। সকালে ট্রেন থেকে নেমে সরাসরি পরীক্ষার হলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এখন আবার স্টেশনে এসে স্ট্যান্ডিং টিকেট কাটলাম। আবারও দাঁড়িয়েই যেতে হবে। বিষয়টা আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মত।’

স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে কথা হয় রোকনুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিয়ে ট্রেনে করে ঢাকায় এসেছেন। এখন যাবেন পাবনায় নিজ বাড়িতে।

রোকন জানালেন, বাস বন্ধ থাকায় ট্রেনে করে পাবনা থেকে প্রথমে ঢাকায় এসেছেন, ঢাকা থেকে ট্রেনে করে আবার চট্টগ্রাম গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন। আবার দাঁড়িয়ে যাবেন পাবনায়।

গত বুধবার রাতে ডিজেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বা ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকালেই পণ্যবাহী গাড়ির মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন ধর্মঘটে যাওয়ার ডাক দেয়। জেলায় জেলায় বাস না চালানোর ঘোষণাও দেয়া হয়।

কেন্দ্রীয়ভাবে বাসমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি বিআরটিএ’র কাছে ভাড়া যৌক্তিক হারে বাড়াতে আবেদন করে। সে আবেদনে লেখা ছিল, জেলায় জেলায় বাসমালিকরা বলছেন, বিদ্যমান ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করলে তাদের লোকসান হবে। তাই তারা বাস চালাবেন না।

এই ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এ বিভাগের আরো খবর