হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশজুড়ে দুই দিন ধরে পরিবহন ধর্মঘট চললেও তার আঁচ এখনও খুব একটা লাগেনি রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে। দু-চারটি সবজির দাম কিছুটা বাড়লেও বেশির ভাগের ক্ষেত্রে দাম আগের মতোই।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, ধর্মঘট আরও বাড়লে বা কড়াকড়ি হলে অচিরেই এর প্রভাব পড়বে কাঁচাবাজারে। বেড়ে যাবে শাকসবজি বা মাছ-মাংসের দাম।
সাধারণ ক্রেতাদের ভাবনা ছিল, দেশে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ার কারণে পরিবহন খাতে ভাড়া বেড়ে বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও।
তবে বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকটি সবজির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা কেজিতে বেড়েছে, যা কাঁচাবাজারে খুব স্বাভাবিক। ধর্মঘটের কারণে বাজারে ওভাবে প্রভাব পড়েনি। শনিবারও শাকসবজির দাম ধর্মঘটের আগের দামেই রয়েছে।
পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাকের ওপর খুব কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি বলে জানালেন বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মকবুল আহমেদ। বললেন, ধর্মঘট চললেও ঢাকার বাইরে থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পিকআপ ও ট্রাক আসছে।
নিউজবাংলাকে মকবুল আহমেদ বলেন, ‘আমরা যার যার অঞ্চল থেকে কাউকে নিষেধ করিনি। তেলের দাম বাড়াতে পোষাচ্ছে না, তাই নিজ নিজ জায়গা থেকে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিছে। আমরা আজকে সবকিছু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বলে এসেছি। আমরাও তো কিনে খাই। কিছু কিছু ট্রাক তো সবজি নিয়ে আসবেই। তাদের কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছে। যারা সবজি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আসছেন, তাদের আমরা কিছু বলছি না।’
গত বুধবার রাতে ডিজেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বা ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ। বৃহস্পতিবার সকালেই পণ্যবাহী গাড়ির মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন ধর্মঘটে যাওয়ার ডাক দেয়। জেলায় জেলায় বাস না চালানোর ঘোষণাও দেয়া হয়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যখন কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছিল, তখনও আলোচনায় ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি। দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে, এমন আভাসও দিয়ে রাখেন অর্থমন্ত্রী।
আর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যয়। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে বাড়তি দামের চাপটা ক্রেতার কাছে এখনও বোঝা হয়ে পৌঁছায়নি।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, বছিলা, কাওরান বাজার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শাকসবজির দাম গতানুগতিক। ক্রেতাদেরও দাম নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই।
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা রবিন মিয়া বলেন, ‘দাম এখনও আগের মতোই আছে দেখছি। আমরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। ধর্মঘটের মধ্যে দাম বাড়লে তো বাজারের কাছেই আসা যাবে না।’
বাজারগুলোতে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলুর দাম ২৫ থেকে ২৮ টাকা। ইন্ডিয়ান রসুন ১৪০ টাকা, দেশি রসুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বিদেশি আদা ১৪০ টাকা। দেশি আদা দেশি ৮০ থেকে ১০০। দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা।
কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী মো. কাওসার বলেন, ‘আদা, রসুন, আলু ও পেঁয়াজ ধর্মঘটের আগের দামেই আছে। যাও দুই-এক টাকা বাড়ে, এটা সারা বছরের নিয়ম। ধর্মঘটের কারণে আলাদাভাবে দাম বাড়ে নাই এখনও। এমনিতেই দাম বেশি। এভাবে ধর্মঘট চলতে থাকলে দাম বাড়তে পারে।’
দাম বাড়া সবজির তালিকার মধ্যে আছে কাঁচা মরিচ, পেঁপে, গাজর, টমেটো ও সিম।
কাঁচা মরিচ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। পেঁপে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজর ও টমেটোর দাম ১০ টাকা বেড়ে এখন ১৪০ টাকা কেজি। আর সিম ১০ টাকা কেজিতে বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে।
বাকি সবজি আগের দামেই আছে। বরবটির দাম প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা। পাতাকপি ৫০ টাকা পিস। কুমড়া ৪০ টাকা কেজি। বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। কচুরমুখী ৪০ টাকা কেজি। ধনে পাতা ১৪০ টাকা। শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস। লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস। চিচিংগা, ঝিঙা ও কুসি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মুলা ৫০ টাকা কেজি। করলা ৮০ টাকা। লেবু ২০ টাকা হালি।
মোহাম্মদপুর বাসস্টান্ডের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী শেখ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চার-পাঁচটি সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। এটা প্রতিদিনের মতোই বাড়ছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহনের খরচ বাড়বে। এখনও ওভাবে সব সবজির দাম না বাড়লেও যদি ধর্মঘট এভাবে চলতে থাকে, তবে সবজি কিনে খেতে মানুষের কষ্ট হবে।’
বাজারে মাংসের দাম এখনও ধর্মঘটের আগের দামেই আছে। ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। লাল লেয়ার ২২০ টাকা। সোনালি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। গরুর মাংস ৫৮০ টাকা। খাসির মাংস ৮৫০ টাকা।