রাজধানীর চকবাজার থানার সোয়ারিঘাটে রোবানা জুতার কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মরদেহ পুরোপুরি শনাক্ত করতে পারেননি স্বজনরা। ডিএনএ পরীক্ষা না হওয়ায় মরদেহ হস্তান্তরেও রাজি হয়নি পুলিশ।
বাহিনীটি বলছে, চেনার উপায় না থাকায় মরদেহ নিতে পারেননি স্বজনরা।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করছিলেন শাহজাহান মিয়া।
নিজেকে নিহত শ্রমিক মনির হোসেনের শ্যালক দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা সকাল ৮টার দিকে খবর পাই কামালবাগের রুমানা কারখানায় আগুনে পাঁচজন মারা গেছে। সারা দেশে বাস-ট্রাক ধর্মঘট চলছে। চাঁদপুর থেকে মিটফোর্ড মেডিক্যাল মর্গে আসতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে লাশ শনাক্ত করলেও পুলিশ মানছে না। পুলিশ বলে, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর স্বজনদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
শাহজাহান বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতি মনির হোসেন দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করে আসছিলেন। তিনি কচুয়া উপজেলার বাইছারামপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন মনির হোসেন।’
চকবাজার থানার পরিদর্শক তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘আগুনে নিহত পাঁচজনের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না।’
কেমন ছিল কারখানার পরিবেশ
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রোবানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামের জুতার কারখানায় এই আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়েছেন আরও দুইজন।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানান, একতলা কারখানার আশপাশে একাধিক কেমিক্যালের দোকান রয়েছে। কারখানাটির পাশে কাঁচাবাজারে থাকা মালামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পুড়ে গেছে।
আবাসিক এলাকার পাশেই কারখানাটি। বার্মিজ ও স্পঞ্জের জুতা তৈরি করা হতো সেখানে। জুতা তৈরিতে ব্যবহার হতো প্রচুর পরিমাণে রাবার, প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল।
কারখানায় কেমিক্যালের ড্রাম দেখা যায়। এ ছাড়া জুতা বানানোর কাজে ব্যবহার করা প্রচুর প্লাস্টিক ও রাবারের স্তূপ দেখা যায় সেখানে।
আগুনের কারণে এসব প্লাস্টিক ও রাবারসহ কেমিক্যাল পুড়ে যায়। এসব দাহ্য পদার্থের কারণেই আগুন বিশাল আকার ধারণ করে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয় রফিক উদ্দিন বলেন, “আমি পাশের একটা দোকানে থাকি রাতে। রাত ১টার দিকে বিশাল একটা সাউন্ড শুনি। এর পরেই ‘আগুন, আগুন’ বলে চিৎকার শুনতে থাকি। আমি আসতে আসতে দেখি আগুন বিশাল আকার ধারণ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘বার্মিজ জুতা বানাতে ডিওপি তেল, প্লাস্টিক ও রাবার ব্যবহার করা হয়। এসব জিনিস থাকায় আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে।’