পঞ্চাশোর্ধ্ব আনোয়ার হোসেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন। টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও এখনও তিনি টিকার কোনো এসএসএম পাননি।
একটি বেসকারি ব্যাংকে চাকরি করেন মিরপুর-১২ এর বাসিন্দা সাদিয়া আফরিন। গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর পল্লবী মাতৃসদন কেন্দ্রে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এখনও তিনি এসএমএস পাননি।
পঞ্চাশোর্ধ্ব এরকম প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করে বসে আছেন।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা কার্যক্রম শুরু হয় চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদের মৃত্যুহার বেশি। করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৬১ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি। তাদের ঝুঁকিপূর্ণ ভেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে টিকায় পিছিয়ে পড়ছে পঞ্চাশোর্ধ্বরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিতে নিবন্ধন করেছে ৫ কোটি ৯২ লাখ ৩ হাজার ৯৫৯ জন। এর মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব নিবন্ধন করেছেন ১ কোটি ৬৮ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬৮ জন। নিবন্ধন করে টিকা পাননি ৫১ লাখ ৫৪ হাজার মানুষ।
তবে এ পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়েছে এই গোষ্ঠীর ১ কোটি ১৭ হাজার ৩২ হাজার ৭৬৫ জনকে। নিবন্ধন করে টিকা পায়নি পঞ্চাশোর্ধ্ব ৩১ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের প্রথম ডোজ আগে নিশ্চিত করে যথাযথ সময় দ্বিতীয় ডোজের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে পরিকল্পনার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণরা সময়মতো টিকা পাচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
করোনায় পঞ্চাশোর্ধ্বরা বেশি ঝুঁকিতে
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাব বলছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জনের বয়স ছিল ৫০ বছরের বেশি।
অধিদপ্তরের তথ্য আরও বলছে, দেশে এ নিয়ে মোট ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৪৮৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ৮৮৭ জনের। এর মধ্যে ৬১ শতাংশের বয়স ছিল ৫০ বছরের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স্ক ব্যক্তিরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা ধরনের দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন বেশি। এ সময় আবার করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের মধ্যে করোনার তীব্রতা বেশি দেখা যায় এবং মৃত্যুহারও তাদের বেশি।
করোনা প্রতিরোধে সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পঞ্চাশোর্ধ্বদের বিশেষ বিবেচনায় পূর্ণাঙ্গ ডোজ টিকা নিশ্চিত করা উচিত। এখন যে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাদের থেকেও বয়স্বদের টিকা দেওয়া প্রয়োজন বেশি। কারণ শিশুদের করোনা আক্রান্ত হলেও তেমন প্রভাব পড়ে না। পঞ্চাশোর্ধ্বরা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এ কারণে টিকাদান কর্মসূচির শুরুর দিকে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার এখন নিয়মিতভাবে টিকা পাচ্ছে। আসলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে এই সমস্যা থাকবে না। এই নিবন্ধিত জনগোষ্ঠীর আগে প্রথম ডোজ নিশ্চিত করতে হবে। পরে প্রথম ডোজপ্রাপ্তদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্বিতীয় ডোজ দ্রুত কীভাবে দেওয়া যায়, পদক্ষেপ নিতে হবে।’
টিকা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন এ প্রবীণ বিশেষজ্ঞ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকা নিবন্ধনের বয়স কমিয়ে আনার পর থেকেই ব্যাপক হারে টিকার নিবন্ধন হচ্ছে। নিবন্ধনের তালিকা অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে। এক কেন্দ্রে দৈনিক ২০০ জনের টিকা দেয়ার সক্ষমতা থাকলেও নিবন্ধন হচ্ছে অনেক বেশি। তবে বয়স্করা নিবন্ধন করে টিকা পাচ্ছেন না, এটা উদ্বেগের বিষয়।
‘আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলব, যারা যাতে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পঞ্চাশোর্ধ্বদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
তবে তিনি উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা সবাই টিকা পাবেন। টুডে অর টুমরো এসএমএস আসবে। এতে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’