জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে দেশজুড়ে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসা মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে বিপাকে পড়েছেন। এ অবস্থায় তাদের ভরসা ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। আর এই যাত্রী ভোগান্তিকে পুঁজি করে কয়েক গুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন এসব ছোট যানবাহনের মালিক-চালকরা। থেমে নেই পরিবহন থেকে চাঁদাবাজিও।
শুক্রবার সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে মানিকগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল প্রায় বন্ধ থাকায় বাস টার্মিনাল ও ফুটওভারব্রিজের পাশে যাত্রীর ভিড় ছিল সকাল থেকেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও গণপরিবহন না পেয়ে বাধ্য হয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন।
প্রাইভেট কারের যাত্রী আব্দুল হালিম, সেলিম মিয়া ও অনিতা রানী বিশ্বাস বললেন, ‘মানিকগঞ্জ থেকে সাভার যেতে জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় গাড়িতে উঠেছি। বাস বন্ধ থাকায় ওরা আমাদের গলা কাটছে। ভাড়া নিচ্ছে কয়েক গুণ বেশি।’
আব্দুর রহিম, কুদ্দুস মিয়া, রজ্জব আলীসহ ভাড়ায় চালিত বেশ কয়েকটি গাড়ির চালক বলেন, ‘গণপরিবহন চালু থাকলে আমাগো গাড়িতে যাত্রী ওঠেন না। যাদের খুব দরকার তারাই গাড়ি ভাড়া করেন। কোনো কারণে বাস বন্ধ থাকলেই কেবল ছোট গাড়ির যাত্রী বাড়ে। যাত্রী বেশি হইলে যারা বেশি ভাড়া দ্যায় তাগো নিয়া যাই।’
জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। এটা মোটেও ঠিক না। বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও ট্যাক্সি আমাদের সংগঠনের আওতাভুক্ত নয়। সে জন্য তাদের কিছু বলতেও পারছি না।’
থেমে নেই চাঁদাবাজি
বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকলেও থেমে নেই পরিবহনসংশ্লিষ্ট চাঁদাবাজরা। মানিকগঞ্জে এসব ছোট যানবাহনে দেদার চাঁদাবাজি চলছে। কোনো চালক চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে নাজেহাল করতেও ছাড়ছে না।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও ফুটওভারব্রিজের নিচ থেকে যাত্রী তুলছে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের চালকরা। আর গাড়তে যাত্রী ওঠানোর পর লাইনম্যান লালন মিয়া, শ্রমিকনেতা মো. শরিফুলসহ কয়েকজন চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। টাকা না দিলে গালাগালি এমনকি শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।
প্রাইভেট কার চালক আব্দুর রশিদ নিউজবাংলাকে বললেন, ‘পাটুরিয়ায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ঢাকায় ফিরছিলাম। মানিকগঞ্জ ওভারব্রিজের নিচে গাড়ি থামিয়ে কয়েকজন যাত্রী তুলি। এ সময় কয়েকজন এসে টাকা চায়। টাকা দিতে না চাইলে গালাগালি ও খারাপ ব্যবহার করে। তাদের ৬০ টাকা দেয়ার পর গাড়ি ছাড়ে।’
ট্যাক্সিচালক আমিরুল বলেন, ‘ঢাকায় ফেরার পথে দেখি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। পরে সাভার ও গাবতলীর কয়েকজন যাত্রী গাড়িতে তুলি। এ সময় দুই ব্যক্তি এসে লাইনম্যান পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করে। পরে ২০ টাকা দিলে ওরা গাড়ি ছেড়ে দেয়।’
চাঁদা আদায়কারীদের একজন লালন মিয়া বলেন, ‘এটা চাঁদা না। গাড়িতে লোকজন তুলে দিই, তারপর চালকদের কাছ থেকে খরচাপাতি নিই। চালকরা যা দেই তা-ই নিই। কোনো জোরজবরদস্তি নাই।’
চাঁদা আদায়ে জড়িত থাকা শ্রমিকনেতা মো. শরিফুলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ গোলাম আজাদ খানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।