বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুর্ভোগে যাত্রী, অনিশ্চয়তায় মালিক-শ্রমিক

  •    
  • ৫ নভেম্বর, ২০২১ ১৬:৪৪

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ পরিবহনের ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বৈঠক ডেকেছে। তবে সেই বৈঠক হবে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার। পরিবহন মালিকদের বক্তব্য হচ্ছে, এই তিন দিন তারা কেন জ্বালানি তেলের জন্য বাড়তি খরচ করে ক্ষতির মুখে পড়বেন।

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে বাস বন্ধ রাখায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। হাজার হাজার চাকরিপ্রত্যাশী হাজারো পরীক্ষার্থী শতেক ভোগান্তি মাথায় নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে গেছেন; কারও কারও যাওয়াই হয়নি।

জরুরি কাজে দূর গন্তব্যের যাত্রীরা ছোট ছোট গাড়িতে কয়েক গুন বেশি ভাড়া দিয়ে রওনা হয়েছে। রিকশায় চেপেও দূরের যাত্রায় রওনা হয়েছে অনেকে।

বুধবার রাত ১২টা থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি মালিকরা শুক্রবার ভোর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেন। পরে রাতে বাস মালিকদের সংগঠনও যাত্রী বহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।

সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআটিএ অবশ্য ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বৈঠক ডেকেছে। তবে সেই বৈঠক হবে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার। পরিবহন মালিকদের বক্তব্য, এই তিন দিন তারা কেন জ্বালানি তেলের জন্য বাড়তি খরচ করে ক্ষতির মুখে পড়বেন।

পণ্য পরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা তাও বৃহস্পতিবার সকাল সকাল এসেছে। কিন্তু বাস না চালানোর ঘোষণা আসে রাতে। ফলে যাত্রীদের অনেকের মধ্যে তথ্যের ঘাটতি ছিল অনেক।

কুমিল্লা

কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডে শুক্রবার ভোর থেকে নীরবতা। চালক ও হেলপারদের হাঁকডাক নেই। নগরীর চকবাজার ও জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডের অবস্থাও একই রকম।

বাসস্ট্যান্ডে ব্যাগ-বইপত্র নিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশী পরীক্ষার্থীকে। পাশাপাশি ছিলেন অন্য যাত্রীরা।

৭টি ব্যাংকের গুচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল দিপু আহসানের।

কুমিল্লার সরকগুলো ছিল এমনই ফাঁকা। ছবি: মাহফুজ নান্টু/নিউজবাংলা

আফসোস নিয়ে দিপু বলেন, ‘আমার আর আজ নিয়োগ পরীক্ষা দেয়া হলো না। কত প্রস্তুতি নিয়েছি। কত আশা ছিল। তা আর পূরণ হলো না। পরীক্ষা কমিটি চাইলে পরীক্ষাগুলো স্থগিত করতে পারত। সব ভোগান্তি আমাদের।’

তবে আগে থেকে বুকিং থাকায় কিছু কিছু ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চললেও নতুন ভাড়ায় কেউ নিচ্ছে না পণ্য পরিবহনও।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কোথাও গণপরিবহন চলাচলের দৃশ্য চোখে না পড়লেও দেখা গেছে পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল। মাইক্রোবাসগুলোতে উপচে পড়ছে যাত্রী।

পদুয়ার বাজার থেকে ঢাকা যেতে দুই ঘণ্টা লাগে। মাইক্রোবাসে নিয়মিত ভাড়া ২ শ টাকা জনপ্রতি, সেখানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

লক্ষ্মীপুর

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকে অলস বসে টার্মিনালের বাস। বাস চলবে না, সে তথ্য জানা না থাকায় যাত্রীরা অপেক্ষ করতে থাকেন দীর্ঘ সময়।

পরিবহন মালিক ফখরুল আলম নাহিদসহ পরিবহন মালিকরা জানান, তেলের দাম বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিলে একই সঙ্গে ভাড়া কত বাড়বে সে ঘোষণাও দিতে হবে সরকারকে। সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি মেনে না নেবে, ততক্ষণ ধর্মঘট চলবে।

বরিশাল

ভোর থেকে বাস টা‌‌র্মিনালে এ‌সেও কো‌নো উপায় না পে‌য়ে ব‌্যা‌গের ওপর বাচ্চা‌কে নি‌য়ে ব‌সে ছিলেন সু‌ফিয়ানা বেগম। নগরীর রুপাতলী এলাকার এই বাসিন্দা‌কে সকাল ৭টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টা‌র্মি‌নালে দেখা যায়।

নিউজবাংলা‌কে তি‌নি বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে মাদারীপুর যাওয়ার জন‌্য টা‌র্মিনালে দুই বছরের বাচ্চা নিয়া ব‌্যাগের ওপরেই বইসা আ‌ছি। পা‌রিবা‌রিক কাজে মাদারীপুর যাওয়া লাগবে। কেমনে যাব বুঝতাছি না।’

ব‌রিশাল জেলা বাস মা‌লিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কি‌শোর কুমার দে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ব‌রিশালেও বাস ধর্মঘট অ‌নি‌র্দিষ্টকা‌লের জন‌্য চলছে, চলবে।’

বরগুনা

সকাল ৯টার দিকে বরগুনা টাউন হল বাস স্টপেজে দেখা গেছে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। কয়েকজন যাত্রী জানান, তারা জানতেনই না যে বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে।

জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, ‘সরকার বাস মালিক শ্রমিকদের কথা চিন্তা না করেই প্রতি লিটার ডিজেল ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। কিন্তু বাস মালিকরা যদি ৫ টাকাও ভাড়া বাড়ান তাহলে সেটা ফলাও করে প্রচার হয়। যাত্রীরা আন্দোলনেও নামেন।

‘বাস চালাতে গেলে রাস্তার খরচ, ড্রাইভার-হেলপার বেতনসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হয়। জ্বালানি তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে না আনলে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’

বাস বন্ধ থাকায় সিলেট নগরী ছিল মোটরবাইক রাইড শেয়ারিং ও মাইক্রোবাসের দখলে। ছবি: দেবাশীষ দেবু/নিউজবাংলা

সিলেট

বাস বন্ধ থাকলেও জেলায় চলছে মাইক্রোবাস, অটোরিকশা, লেগুনাসহ ছোট যানবাহন। তবে বেড়ে গেছে ভাড়া।

মোটরবাইক রাইড শেয়ারিংয়ের চালকরাও ধর্মঘটের সুযোগে দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাড়তি ভাড়া সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে এসব পরিবহনে ভিড় করছেন যাত্রীরা।

জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আশিক আহমদ। তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাইনি। পরে দেড় হাজার টাকায় একটি মাইক্রোতে উঠেছি।’

ধর্মঘট প্রসঙ্গে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করেই আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। ডিজেলের দাম বাড়ায় যাত্রীদেরকেই বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। যে হারে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে তাতে গাড়ি চালিয়ে লাভের চেয়ে লোকসানই হবে।’

রাজশাহী

বাস বন্ধ থাকায় রাজশাহী সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন।

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ মহাসড়কে সকাল থেকে প্রচুরসংখ্যক অটোরিকশা ও টেম্পু চলাচল করছে।

জেলা ট্রাক মলিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাদরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহীর কোনো ট্রাক আজ চলেনি। বাইরের কোনো জেলা থেকেও কোনো ট্রাক রাজশাহীতে আসেনি। এটা ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতি চলছে। সেন্ট্রাল থেকে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ট্রাক রাস্তায় নামবে না।’

রাজশাহী বিভাগের নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও একাত্মতা জানিয়ে ধর্মঘট চালাচ্ছেন।

রংপুর

রংপুরের ঢাকা কোচ স্ট্যান্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে ট্রাক, ট্যাংক লরিগুলো বিভিন্ন রাস্তার পাশে, তেলপাম্পে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে, বাসগুলো স্ট্যান্ডে। সড়ক ফাঁকা।

ট্রাক বন্ধ থাকায় কাঁচামাল নিয়ে চরম বেকায়দায় ব্যবসায়ীরা।

কাঁচামাল ব্যবসায়ী হারুণ অর রশিদ বলেন, ‘প্রতিদিন অর্ধশত ট্রাক রংপুর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। এক দিন বন্ধ থাকলে অনেক মালামাল নষ্ট হবে। দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহার চাই।’

রংপুর শহরে টার্মিনালগুলো ছিল বন্ধ। ছবি: রফিকুল ইসলাম।নিউজবাংলা

রংপুর ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। আমাদের করার কিছু নাই।’

রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মালিক সমিতি ধর্মঘট করছে না। তবে কোনো মালিক গাড়ি চালাচ্ছেন না। কেউ চালালে বাধা দেবে না সমিতি। আবার কেউ না চালালেও গাড়ি চালাতে বলবে না।’

যশোরসকাল থেকে ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে যশোর থেকে বিভিন্ন বাজার ও উপজেলা শহরগুলোতে যেতে ইজিবাইক ছাড়া ভিন্ন বাহন ছিল না। নিরুপায় হয়ে তিন গুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হয় গন্তব্যে।

শহরের মণিহার, শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, ইজিবাইকে করেই যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন। যে জায়গার ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা ছিল, সেখানে তারা ৫০ টাকা চাচ্ছেন।

যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, ‘করোনায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতের। এমন সময়ে তেলের দাম এক লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধি জুলুম। ডিজেলের দাম না কমা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’

সাতক্ষীরায় চলেছে ধর্মঘট। ছবি: রফিকুল ইসলাম শাওন/নিউজবাংলা

নেত্রকোণা

শহরের পারলা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আন্তজেলা ও ঢাকাসহ দেশের কোথাও বাস ছেড়ে যায়নি। এদিকে শহরের বারহাট্রা রোড থেকেও বাস-ট্রাক কিছুই ছাড়েনি।

নেত্রকোণা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ খান বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ায় বর্তমান ভাড়ায় পরিবহন চালালে লোকসান গুনতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া নাগাদ ধর্মঘট চলবে।’

গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক রাসেল মিয়া বলেন, ‘ঢাকা লাগাত যাইতে অহন তিন হাজার টাহার তেল বেশি লাগে। ভাড়া বাড়েনি। আমরা লোকসান দিয়া গাড়ি চারায়াম কেমনে। ভাড়া বাড়াক। নাইলে তেলের দাম কমাক সরকার।’

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কুমিল্লা থেকে মাহফুজ নান্টু, লক্ষ্মীপুর থেকে আব্বাস হোসাইন, বরিশাল থেকে তন্ময় তপু, বরগুনা থেকে রুদ্র রুহান, সিলেট থেকে দেবাশীষ দেবু, রাজশাহী থেকে আহসান হাবীব অপু, রংপুর থেকে রফিকুল ইসলাম, যশোর থেকে নিশাত বিজয় ও নেত্রকোণা থেকে অনিন্দ্য পাল চৌধুরী।

এ বিভাগের আরো খবর