ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ার প্রতিবাদে ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহারে সরকার আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দিচ্ছেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। রোববারের আগে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পরিবহনসংশ্লিষ্টরা।
২৬টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে শুক্রবার। সেই সঙ্গে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজে ভর্তি পরীক্ষাও। বাস না চলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন পরীক্ষার্থীরা।
বিষয়টিকে ‘অসহনীয়’ আখ্যা দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাজধানীর সরকারি বাসভবনে শুক্রবার ব্রিফিংয়ে কাদের বলেন, ‘রোববার বিআরটিএ এবং বাসমালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলো ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’
ওই বৈঠকে ভাড়া সমন্বয়ের কথা জানিয়ে কাদের বলেন, ‘সেখানে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের (অংশীজন) সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবভিত্তিক সমন্বয়ের মাধ্যম জনগণের ওপর বাড়তি চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হবে।’
সরকারের এমন আশ্বাসেও সন্তুষ্ট নন পরিবহন মালিকরা। ধর্মঘট চালিয়ে যেতে চান তারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার সভার আগে ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘সব জেলা সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস বন্ধ করেছে। মালিকদের সমর্থন দেয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক করা প্রয়োজন ছিল বলে মত দেন এনায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেন, ‘সরকারের সমন্বয়হীনতার কারণে এই দুর্ভোগ হচ্ছে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে ভাড়া পুনর্নির্ধারণে চিঠি দেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তাতে সাড়া দিয়ে রোববার ১১টায় বৈঠক করার কথা জানায় সরকারি সংস্থাটি। তার মধ্যেই ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিক সমিতি।
বিআরটিএর বৈঠকে ভাড়া সমন্বয় করার কথা বলা হলেও তার সঙ্গে পণ্য পরিবহনের সম্পর্ক নেই বলে জানান ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান।
যাত্রী পরিবহনের সঙ্গে জড়িত পরিবহনের ভাড়া সমন্বয় করার সুযোগ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে পণ্য পরিবহনে সাড়ে তিন লাখ ট্রাক আছে, সেখানে তো ভাড়া সমন্বয় হয় না।’
তিনি বলেন, ‘ট্রাক ভাড়ার সঙ্গে তো ভাড়া পুনর্নির্ধারণের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ভাড়া তো মার্কেটে প্রতিদিন ওঠানামা করে। জ্বালানি তেলের দাম না কমালে সেটার কোনো ইয়ে (সুরাহা) হবে না।’
রুস্তম আলী বলেন, ‘পণ্য পরিবহনসংশ্লিষ্টদের একটাই দাবি, জ্বালানি তেলের যে দাম বাড়ানো হয়েছে সেটা কমিয়ে দিলেই তো হয়ে যায়।’
ধর্মঘট কেন
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে দেশেও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। লিটারপ্রতি এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৮০ টাকা।
প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর সরকার জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করল। ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমিয়েছিল।
করোনা শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এতে গত অক্টোবরেই সরকার সোয়া ৭০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিয়েছে।
নতুন দাম কার্যকর হওয়ায় ডিজেলে সরকার আর লোকসান দেবে না; বরং লিটারে দুই টাকার মতো মুনাফা করবে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন।
দেশে এর আগে কখনো এক লাফে এত বেশি হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়নি।
দাম বাড়ানোর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে।