দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, এমন অবস্থায় বিএনপির আন্দোলনের ডাকে সরকার পতনের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (জেটেব) ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
আমীর খসরু বলেন, ‘মানববন্ধনের পাশে মহিলারা দাঁড়িয়ে আমাদের বক্তব্য শুনছেন। আন্দোলনের দিকে যখন দেশ যায়, আন্দোলন যখন সফলতা পায়, যখন সরকার পতনের সময় ঘনিয়ে আসে- এটা কিন্তু একটা লক্ষণ। আমি আজকে সে লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। এটা অত্যন্ত ভালো ও শুভ লক্ষণ।’
ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার, যা বৃহস্পতিবার রাত থেকে কার্যকর করেছে। এর প্রতিবাদে বাস মালিক-শ্রমিকরা শুক্রবার থেকে সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও বন্ধ রয়েছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী খসরু বলেন, ‘পণ্যের দাম বাড়ানোর সঙ্গে একটি স্বৈরাচারী সরকার সরাসরি ইনভলভ থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। যেখানে একটি দল ও সরকার একাকার হয়ে যায়, সেখানে আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, লুটপাট করছে। তারাই জনগণের ভোট কেড়ে নিচ্ছে । তারা জনগণের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। তারা একই ব্যক্তি। আজকে যাদের দায়িত্ব দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারাই লুটপাট করছে। তারা সরাসরি লুটপাটের সঙ্গে জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘ব্যয়বহুল ইনডেক্সে বাংলাদেশ শীর্ষে। দুর্নীতিতে তেমনি শীর্ষে উঠেছে, পরিবেশ দূষণেও শীর্ষে। সবকিছুর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এই টাকা বাংলাদেশের মানুষের পকেট থেকে যাবে, টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে লুটপাটের ব্যবস্থা করেছে তারা। কোনো টাকা দেশে থাকছে না, সব টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘দেশের জনগণের কোনো সরকার নেই। তাই তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, জবাবদিহি নেই। তারা বারবার জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। তাদের জানা উচিত, চোরের ১০ দিন, গেরস্তের এক দিন।’
বিএনপি এবার যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, তাতে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে জানান তিনি।
খসরু বলেন, ‘নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যত সংস্থা আছে তার কর্মকাণ্ড কীভাবে হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে এর বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। তাই বলছি যদি মনে করেন, এর বাইরে কোনো কিছু করে আবার ক্ষমতায় যাবেন, সেটা করতে দেয়া হবে না।’
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য বলেন, ‘প্রত্যেকটি মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নেয়া হয়েছে। আর সেসব করতে দেয়া হবে না। এখন ঘুরে দাঁড়াব।’
ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে শুধু বাসভাড়া বাড়বে না, এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। এতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, সেটা আবার জনগণকে দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
খসরু বলেন, ‘এর থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে, এদের থেকে দেশকে মুক্ত করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয়, জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ছাড়া সেটা সম্ভব হবে না।’
এ সময় তিনি বিএনপির আন্দোলনের ডাকে সবাইকে সাড়া দিয়ে রাজপথে নামার আহ্বান জানান।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহমেদ আজম খান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীমসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।