বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুই মহাসড়কে বন্ধ বাস, বাড়তি ভাড়ায় ভোগান্তি

  •    
  • ৫ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:০৯

ভোর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড়, শিমরাইল, মদনপুর, মোগড়াপাড়া এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপসী ও গাউছিয়া এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন অসংখ্য যাত্রী। গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই পিকআপভ্যানে রওনা হন গন্তব্যে, তবে কয়েকটি বাস চললেও তিন গুণের মতো ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে দেশব্যাপী চলছে পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা বাস ধর্মঘট। এরই জেরে বন্ধ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বাস-ট্রাক চলাচল।

এমন বাস্তবতায় পরিবহন সংকট ও বাড়তি ভাড়া নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা, তবে মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের অংশের কোথাও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।

ভোর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড়, শিমরাইল, মদনপুর, মোগড়াপাড়া এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপসী ও গাউছিয়া এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন অসংখ্য যাত্রী। গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই পিকআপভ্যানে রওনা হন গন্তব্যের উদ্দেশে।

কিছু কিছু বাস চললেও তিন গুণের মতো ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ভোগান্তি এড়াতে অনেকে বাধ্য হয়েই বর্ধিত ভাড়াতেই চড়ছেন সেসব বাসে।

রংপুর থেকে চাদঁপুর যেতে শিমরাইল এলাকায় এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া। সঙ্গে ছিল স্ত্রী ও সন্তান।

ফিরোজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমার শ্বশুর মারা গেছেন। তাই চাঁদপুরে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছি।

‘ভোরে বাসে করে নারায়ণগঞ্জে এসেছি, কিন্তু এখান থেকে আর যেতে পারছি না বাস না থাকায়। আমরা গ্রামে গেলে তারপর মরদেহের দাফন হওয়ার কথা।’

বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রী। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষকে বিপদে ফেলে কী লাভ তাদের (পরিবহন মালিক সমিতি)। ডিজেলের দাম বেড়েছে। এ কারণে ধর্মঘটের কী আছে?

‘আলোচনার মাধ্যমে ভাড়া ঠিক করতে পারত। মানুষকে কষ্ট দিয়ে বা বেশি ভাড়া নিয়ে লাভ কী।’

সানারপাড় এলাকার আশিকুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আজ ছোট বোনের বিয়ে। তাই নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়ি যেতে হবে।

‘রাস্তায় এসে জানি ধর্মঘট, বাস নাই। এদিকে বাড়ি থেকে বারবার ফোন করছে। কারণ বোনের কিছু মালপত্র আমার সঙ্গে। কী করব বুঝতে পারছি না।’

সাইনবোর্ড থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি যাবেন মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুস সুবহান। বুধবার ফতুল্লায় বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। শুক্রবার মাদ্রাসায় ফেরার কথা তার। বাড়ি থেকে ইজিবাইকে সাইনবোর্ড এলাকায় এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে গাড়ি নাই, দুই-একটা চলছে, ভাড়া আকাশছোঁয়া।

‘দাউদকান্দির ভাড়া ছিল ৭০ টাকা, আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে তা ১৫০ টাকা চায়। পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট ডেকে মানুষকে জিম্মি করে বেশি ভাড়া বাড়াতে চায়।’

ডিপোতে ফিরতে থাকা বাসগুলোয় যাত্রী নেয়া হলেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। ছবি: নিউজবাংলা

চট্টগ্রাম যেতে রাজধানীর ডেমরা থেকে শিমরাইল এলাকায় এসেছেন মৌসুমি রহমান। তার সঙ্গে তিন বছরের মেয়ে। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে গাড়ি না পেয়ে মেয়েকে নিয়ে ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িতে বসে পড়েন।

তিনি বলেন, ‘ডিজেলের দাম বেড়েছে। এ জন্য ভাড়া কিছু বেশি নিলেই হয়। মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে বাড়ালেই হয়, তবে তা না করে বাসের মালিকরা মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছেন।

‘চট্টগ্রামের গাড়ি নাই। কুমিল্লা পর্যন্ত কিছু বাস চলছে, তবে ভাড়া তিন গুণ। ১০০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৩০০ টাকা। তাও বাসে উঠতে পারছি না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাসের এক সুপারভাইজার বলেন, ‘ধর্মঘট চলছে, গাড়ি ছাড়া নিষেধ। তবুও কিছু গাড়ি চলছে। কারণ গাড়িগুলোকে ডিপোতে ফিরতে হবে। যেগুলো চলছে সেগুলো যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ডিপোতে যাবে।’

বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই। কারণ পাম্প থেকে ডিজেল দিচ্ছে না গাড়িতে। পাম্পমালিকরা তাদের কাছে মজুত করা ডিজেল বাড়তি দরে বিক্রি করছে। তাই সকাল থেকে যে কয়টা বাস চলছে তাতে ভাড়া বাড়তি নেয়া হচ্ছে।’

মহাসড়কে চলছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস। তারা আগের মূল্যেই টিকিটও বিক্রি করছে।

এ কারণে শিমরাইল কাউন্টারে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামের বাস ছেড়ে যাচ্ছে, তবে যাত্রীর তুলনায় সংখ্যা সীমিত।

বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সুপারভাইজার সুরুজ আলী বলেন, ‘পরিবহন চলাচল বন্ধ, তাই অন্য দিনের তুলনায় যাত্রী অনেক। ভাড়া আগের দরেই নেয়া হচ্ছে। এ কারণেই মানুষ ভোর থেকে কাউন্টারে আসছেন।’

এদিকে মহাসড়কের কোথাও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। পরিবহন সমিতির নেতা-কর্মীরাও সড়কে অবস্থান নেননি।

নারায়ণগঞ্জ বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি দিদারুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছি। এর বাইরে কোনো কর্মসূচি নেই।

‘আমরা চাই হয় ডিজলের দাম কমানো হোক, না হলে গাড়ি ভাড়া বাড়ানো হোক।’

এদিকে নগরীর সব স্ট্যান্ড থেকে ট্রাক চলাচলও বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি। তাদের দাবি, ধর্মঘটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ট্রাক চলবে না।

নারায়ণগঞ্জ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আনু বলেন, ‘নগরীর নিতাইগঞ্জ ও শিল্প নগরীর বিসিক থেকে সারা দেশে মালামাল যায়। আগের ভাড়ায় যদি এখন গাড়ি চলে তাহলে আমাদের গাড়ির ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। তাই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া ট্রাক চলবে না।’

মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি করছেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিভিন্ন এলাকায় তারা অবস্থান নিয়েছেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক (শিমরাইল) মশিউর রহমান বলেন, ‘বেশিরভাগ গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে, তবে কিছু বাস চলছে।

‘এসব বাসের সংশ্লিষ্টরা যে যার মতো করে ভাড়া নিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি, তবে সরকারি নির্দেশনা আসার পর কোনো পরিবহন যদি যাত্রীদের কাছে থেকে বাড়তি ভাড়া নেয় তাহলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর