বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে জামালপুর যেতে মহাখালী বাস টার্মিনালে এসেছেন রফিক। টার্মিনালে পৌঁছে জানতে পারেন বাস বন্ধ; যাওয়া যাবে না। বাস না পেয়ে অপেক্ষা করছেন অন্য কোনো ব্যবস্থায় যাওয়া যায় কি না।
সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বসে থেকেও বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি রফিক।
ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে শুক্রবার বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবহন মালিক সমিতি। এ সিদ্ধান্তে দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।
রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, রফিকের মতো অনেকে ঢাকার বাইরে যেতে টার্মিনালে এসেছেন। কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। কেউ বাসায় ফিরে যাচ্ছেন, কেউ বা বিকল্প ব্যবস্থার ঢাকা ছাড়ার অপেক্ষা করছেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের কর্মচারী নাজমুল বলেন, ‘গতকাল আমাদের জানানো হইছে আজকে কোনো বাস ছাড়বে না। আমাদের কাউন্টার বন্ধ। সকাল থেকে অনেক যাত্রী এসেছে। তারা হয়তো বন্ধের খবর জানেন না।’
নতুন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ঢাকা থেকে তাদের কোনো গাড়ি ছেড়ে যাবে না বলে জানান নাজমুল।
হঠাৎ বাস ধর্মঘটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা। ঢাকা ছাড়তে গিয়ে দেখেন বাস বন্ধ। মহাখালী টার্মিনাল থেকে ছবিটি তুলেছেন পিয়াস বিশ্বাস।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা গতকাল জানতে পারনেনি রফিক। তিনি বলেন, ‘গতকালের খবর আমরা জানি না। সকালে বের হওয়ার সময় গাড়ি কম দেখে ভাবছি শুক্রবার। তাই গাড়ি কম। টার্মিনালে আইসা দেখি, এই অবস্থা। এখন কেমনে বাড়ি যাব, জানি না।’
বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ছেন নগরীতে বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। বাসই যাদের ভরসা, তারা হেঁটে, রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিবশা, উবার বা পাঠাওয়ের মতো রাইড সার্ভিস নিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছেন। এতেও রয়েছে বাড়তি ভাড়ার ভোগান্তি।
দক্ষিণ বনশ্রী থেকে মালিবাগ যাওয়ার জন্য রিকশা ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে বলে জানান ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক যাত্রী।
বাড়তি ভাড়া দিয়েও কোনো গাড়ি না পেয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে অনেককে। বাড্ডা লিংক রোডে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য ভিড় দেখা গেছে সাধারণ মানুষের।
কোনো একটি মোটরসাইকেল কিংবা অটোরিকশা এসে দাঁড়ালে ৪-৫ জন একসঙ্গে দরদাম করতে দেখা গেছে। যাত্রী বেশি থাকায় চালকরাও বেশি ভাড়া দাবি করেন।
মোটরসাইকেলে চুক্তিভিত্তিক চলাচলের নিয়ম না থাকলেও বাস বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মোটরসাইকেল চলছে চুক্তিতে। ট্রাফিক পুলিশ অন্যান্য দিন তাদের মামলা দিলেও সকাল থেকে কিছুটা নমনীয় দেখা গেছে তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রমনা ট্রাফিক জোনের একজন সার্জেন্ট বলেন, ‘সাধারণত চুক্তিভিত্তিক মোটরসাইকেল চালালে আমরা ব্যবস্থা নিই। কিন্তু আজকে যাত্রীদের কথা বিবেচনায় ছাড় দিচ্ছি।’
তিনি জানান, শুক্রবার হলেও ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা থাকায় মানুষের চলাচল রয়েছে, তবে বাস বন্ধ থাকায় যানজট নেই।
পরিবহন মালিক শ্রমিকদের এমন সিদ্ধান্তকে চোখে ধুয়া দেয়া বলছেন অনেকে। মহাখালী টার্মিনালে এক পরিবহন নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবদেকের।
তিনি বলেন, ‘দেখবেন ডিজেলের দাম কিছু কমবে। সরকার এই সিদ্ধান্ত নেবে। এই যে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে, কমার পর নেতারা বলবে, এই যে তোমাদের আন্দোলনের কারণে কমেছে। মূলত সব আইওয়াশ। রোববার সিদ্ধান্ত আসলে দেখা যাবে।’
বুধবার রাত ১২টা থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরিমালিকরা শুক্রবার ভোর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।
বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএকে চিঠি দিয়ে যৌক্তিক হারে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, জেলায় জেলায় পরিবহন মালিকরা সমিতিকে বলেছেন ভাড়া না বাড়ালে তাদের লোকসান হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিকেল পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে বাস চালানোর কথা জানিয়েছেন। তবে রাতে তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টানোর কথা বলেন।
নিউজবাংলাকে রাত ১০টার দিকে তিনি বলেন, ‘শুক্রবার কোনো গণপরিবহন চলবে না। জেলার পরিবহন মালিকরা তাদের পরিবহন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা তাদের এই অবস্থানকে সমর্থন করেছি।
‘আগামী রোববার বিআরটিএর সঙ্গে আমাদের বৈঠক আছে। বৈঠকে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেব।’