ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি শুক্রবার বাস বন্ধ রেখে ধর্মঘট করছে পরিবহন মালিক সমিতি। বাস না চললেও শুক্রবার অন্তত ২৬টি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে হাজারো পরীক্ষার্থীকে।
শুক্রবার বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তিনটি পদে পরীক্ষা হচ্ছে। পদগুলো হলো ১২ গ্রেডের কম্পিউটার অপারেটর, ১৩ গ্রেডের সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং ১৪ গ্রেডের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর।
এসব পরীক্ষার একটি কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পরীক্ষার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হেঁটে বা অধিক ভাড়া দিয়ে রিকশা বা সিএনজিতে করে পরীক্ষা দিতে এসেছেন।
তারা বলছেন, এমনিতেই তারা বেকার, তার ওপর ২০ টাকার ভাড়া ১৪০ টাকা দিয়ে তাদের পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে হচ্ছে। এটি তাদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।
মিরপুর থেকে আসা পরীক্ষার্থী মিজান বলেন, ‘গাড়ি ছিল না, তবে আমার একটা সাইকেল ছিল। বাধ্য হয়ে সেটি চালিয়েই আসতে হয়েছে। আমি না হয় আসতে পেরেছি, কিন্তু যাদের কিছুই নেই বা দূর থেকে আসবে, তারা তো আসতেই পারবে না।
‘আজকে অনেক পরীক্ষা। সিএনজি ভাড়া করে আসা-যাওয়া করে দুই-তিনটা পরীক্ষা দেয়া আমাদের মতো অনেক বেকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি আমাদের জন্য চরম ভোগান্তির।’
পরীক্ষা দিতে সকালে বরিশাল থেকে এসে ঢাকায় নেমেছেন মিলন পাল। তিনি বলেন, ‘৬টার দিকে লঞ্চ থেকে নামলাম। এসে দেখি কোনো বাস নেই। উপায় না পেয়ে ১৪০ টাকা দিয়ে রিকশায় করে আসলাম। বাসে আসলে আমার খরচ হতো শুধু ২০ টাকা। আমার মতো বেকারের জন্য এটি আসলেই অনেক কষ্টের।’
মিলন বলেন, ‘এখানে পরীক্ষা শেষ করে যেতে হবে মিরপুর। সেখানে আরেকটি পরীক্ষা। আমরা তো ভাই বেকার মানুষ। এত টাকা দিয়ে রিকশা সিএনজিতে করে আসার টাকা নেই। হাঁটাই শেষ ভরসা।’
সূত্রাপুর থেকে পরীক্ষা দিতে এসেছেন সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বাস ছিল না। অনেকক্ষণ বসেও গাড়ি না পেয়ে হেঁটে দোহাগঞ্জ আসছি। সেখান থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে গুলিস্তান নামি। এরপর সেখান থেকে হেঁটে পরীক্ষা দিতে আসছি।’
উত্তরা থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছেছেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। রাস্তায় এসে দেখি গাড়ি নেই। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে বিআরটিসি পেলাম। বিআরটিসি অর্ধেকে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে বিমানবন্দর, সেখান থেকে আবার খিলক্ষেত। এভাবে কেটে কেটে অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত আসা।’
এই পরীক্ষার্থী বলেন, এমনিতেই বেকার; বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে। গাড়ি না চললে খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
শুক্রবার যেসব নিয়োগ পরীক্ষা
শুক্রবার সকালের পালায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, কর কমিশনারের কার্যালয়, কর অঞ্চল-১৪, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।
শ্রম আদালত, সিলেট; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য অধিদপ্তর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে সমন্বিত সাত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি, শ্রম আদালত, সিলেট (দ্বিতীয় শিফট), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (দ্বিতীয় শিফট) এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ (দ্বিতীয় শিফট)-এর পরীক্ষা।