শখ থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দেশীয় জাতের ১০ জোড়া কবুতর পালা শুরু করেছিলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার বড় আদিমপুর গ্রামের আবু সাঈদ।
সত্তরোর্ধ্ব সাঈদ সেই কবুতর পালন করেই হয়ে উঠেছেন সফল খামারি। এই পাঁচ বছরে তার কবুতরের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০০ জোড়া। কবুতরের প্রজাতির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩০টি।
শখ থেকে শুরু করা কবুতরই এখন হয়ে উঠেছে সাঈদের আয়ের অন্যতম উৎস। খরচ বাদে বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় লাখ টাকা।
ওই খামারে গেলে কথা হয় আবু সাঈদের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২৩ হাজার টাকায় ১০ জোড়া কবুতর দিয়ে খামার শুরু করেন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বাড়িতে ৮৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৯ ফিট প্রশস্ত কবুতরের খামার দেখাশোনা করতে এখন তাকে সহযোগিতা করেন দুজন শ্রমিক।
সাঈদ আরও জানান, খামার থেকেই বেশি কবুতর বিক্রি হয় তার। এ ছাড়া ঢাকা গাজীপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও খামারিরা এসে বাচ্চা কবুতর কিনে নিয়ে যান।
আবু সাঈদের খামারে রয়েছে ইন্ডিয়ান ফান্টেল, লাহোর কালো, হলুদ, তুরিবাজ লাল, কালো, এলমন্ড, ইন্ডিয়ান নোটন, দেশি লোটন, বাশিরাজ কোকা, মাক্সি রেচার হুমা, সবজে গিরিবাজ, লাল, সাদা, হলুদ বোম্বাই, আমেরিকান সো কিং, কালদম, মুক্ষি লাল, হলুদ, কালো, সিলভার, কফি, ঝরনা শাটিন, ল্যাভেন্ডার সুয়া চন্দন, শেকড়সহ ৩০ প্রজাতির কবুতর। এসব কবুতরের জোড়ার বাজার দাম ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সাঈদ জানান, দেশের সব প্রজাতির কবুতর সংগ্রহ করবেন তিনি। এ ছাড়া বিদেশ থেকেও কবুতর সংগ্রহের ইচ্ছা আছে তার।
শখের বসে কবুতর পালন শুরু করেন সাঈদ
শখের বসে শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করছেন জানিয়ে সাঈদ বলেন, চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ঘুরে বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারেন। কারণ কবুতরের চাহিদা থাকে সব সময়। সরকারি সহযোগিতা পেলে কবুতর রপ্তানি করে বছরে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব।
নাটোরের হালসা থেকে সাঈদের খামারে কবুতর কিনতে গিয়েছিলেন বেলাল হোসেন। তিনি জানান, দেড় মাস আগে ওই খামার থেকে দেড় লাখ টাকার কবুতরের বাচ্চা কিনেছেন। সেই বাচ্চা নিজে পালন করার পাশাপাশি স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করেছেন। এতে শখ পূরণের পাশাপাশি তার লাভও হয়েছে। এ জন্য ফের তিনি কবুতরের বাচ্চা নিতে এসেছেন।
আবু সাঈদের চাচা নজরুল ইসলাম জানান, শখের বসে কবুতর পালা শুরু করলেও এখন তার ভাতিজা সফল খামারি। সাঈদ নিজেই সবকিছু দেখাশোনা করেন। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন কবুতর দেখতে সাঈদের খামারে আসেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এস এম খুরশিদ আলম জানান, আবু সাঈদ একজন সফল খামারি। তার খামার পরিদর্শন করে তাদের খুবই ভালো লেগেছে। সিংড়া উপজেলায় শতাধিক কবুতরের খামার আছে। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে নিয়মিত তাদের খোঁজখবর রাখা হয়। যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিরুল ইসলাম জানান, তিনি নিজেও কবুতরপ্রেমী। ২০০০ সাল থেকে তিনিও কবুতর পালন করেন। আবু সাঈদের খামার দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছে।
সাঈদের কবুতরের খামার সিংড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় বলেও জানান তিনি।