বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারী ও দেশে বিনিয়োগ আনতে ভূমিকা রাখতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ সেন্টারের চার্চিল হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২১: বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হন শেখ হাসিনা। প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগ করলে তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা যারা আছেন, তাদের আমি অনুরোধ করব যে আপনারা এখন নিজের দেশে আসেন, ইনভেস্ট করেন। আর এখানে যারা ব্যবসা করছেন, আপনারা বাংলাদেশে আপনাদের ইন্ডাস্ট্রি করতে পারেন। আপনারা আসেন এবং যারা ব্রিটিশ ইনভেস্টর আছেন, তাদের পার্টনার করে নিয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে আপনারা বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করেন।’
জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, লাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রো প্রসেসিং, ব্লু-ইকোনমি, ট্যুরিজম, হাইটেক ইন্ডাস্ট্রি, তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটিশ উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য এসব খাতের বাইরেও যেকোনো খাত বেছে নিতে পারেন বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো এ দেশে (যুক্তরাজ্য) মানুষ ভাত আর কারি খাচ্ছে। তো এই ক্ষেত্রে আপনারা যদি আমাদের দেশে বিশেষ করে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলেন, তাহলে আমি মনে করি, আরও বেশি ভালো, একেবারে তাজা শাক-সবজি, মাছ, ফলমূল সব নিয়ে আসতে পারবেন।’
বাংলাদেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সারা বছরই আমরা সব ধরনের সবজি এবং সবকিছু উৎপাদন করতে পারি। গবেষণার মাধ্যমে সেটা আমরা অর্জন করেছি।’
ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সব রকম সুযোগ-সুবিধা তাদের দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘কারও যদি কোনো অসুবিধা থাকে, অবশ্যই আমি আছি। সহজভাবে যাতে সব ধরনের ব্যবসা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেব। আমি খুব খুশি হব, আমাদের বাংলাদেশি যারা আজকে গ্রেট ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছেন, তারা যদি বাংলাদেশে আসেন এবং ব্যবসা করেন। তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা দেয়া হবে।’
১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ২৮টি হাই-টেক পার্ক বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে বিনিয়োগে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীদের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বেছে নিতেও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্রুত নগরায়ন, মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল বাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ার কারণে বাংলাদেশ এখন আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।’
পুঁজিবাজারেও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘অনুকূল ব্যবসা পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সরকারের এজেন্সিগুলো সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবে।’
এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সফলভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্পও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অগ্রগতির কথাও বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দেশকে উন্নত করতে সরকারের প্রচেষ্টার ফলে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দিয়েছে।’
এই বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উপভোগ করছে। শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ায় যারা এগিয়ে এসেছে, যুক্তরাজ্য তাদের মধ্যে অন্যতম। তখন থেকে দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী থেকে আরও শক্তিশালী হচ্ছে।’
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সম্পর্ক আরও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোড শোটি ব্যবসা ও বিনিয়োগে বাংলাদেশের সম্ভাবনাগুলোকে তুলে ধরবে।’
অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লস ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও বক্তব্য দেন।