রাজধানীর অভিজাত এলাকায় মাদকের কারবার চালাতেন নাফিস মোহাম্মদ আলম নামে এক শিক্ষার্থী। বিপুল পরিমাণ মাদক নিয়েও অবাধে যাতায়াত করতেন তিনি। কারণ চলাফেরা, বেশ-ভুষণে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর এক পুলিশ কর্মকর্তা।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নাফিস ও তার সহযোগী রাত্রি খানকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও ভুয়া পুলিশ সরঞ্জামসহ আটক করেছে র্যাব-১।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বসুন্ধরা আবাসিক এইচ ব্লকের ১০ নম্বর রোডে ৩১০ নম্বর বাড়ি থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩৬১ বোতল বিদেশি মদ, ২৯৯ ক্যান বিয়ার, ৫০ গ্রাম গাঁজা, ০.৩৪ গ্রাম আইস, তিনটি প্যাথেড্রিন ইনজেকশন, আটটি মাদক সেবনের উপকরণ, মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত পুলিশ লেখা স্টিকার ও বিকন লাইটসহ একটি প্রাইভেটকার।
চারটি ওয়াকিটাকি সেট, দুটি ওয়াকিটাকি চার্জার, একটি সিগন্যাল লাইট, পুলিশ মনোগ্রাম সংযুক্ত একটি ব্যারেট ক্যাপ, দুটি পুলিশের কটি, চারটি পুলিশের মনোগ্রাম সম্বলিত কোটপিন, দুটি প্লাস্টিকের খেলনা পিস্তল, দুটি হোলস্টার, পাঁচটি খালি কার্তুজ, চারটি ভিসা কার্ড, একটি পাসপোর্ট, দুটি স্পাই ক্যামেরা, একটি হার্ডডিস্ক, একটি ল্যাপটপ, ক্যাসিনো খেলার উপকরণ, চারটি মোবাইল ফোন ও চার লাখ ৭৯ হাজার ৩৫ টাকাও জব্দ করা হয়।
উদ্ধার করা মাদক ও পুলিশের সরঞ্জাম
র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া অফিসার) নোমান আহমদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১ জানতে পারে যে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিপুল পরিমাণ মাদকসহ কয়েকজন অবস্থান করছে। পরে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় র্যাব-১ এর একটি দল ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। অভিযানে নাফিস মোহাম্মদ আলম ও রাত্রি খানকে আটক করা হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদে নাফিস জানান, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এই পরিচয়েই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। পরে ওই বাসা থেকে মাদক কারবার শুরু করেন।
নাফিস মূলত বিদেশি মদের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা। রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে সরবরাহ করতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সিন্ডিকেট ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি গ্রুপ পরিচালনা করে, এই গ্রুপের মাধ্যমে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, মাদক পরিবহন, সরবরাহ ও বিক্রি করতে গিয়ে নাফিস অবলীলায় নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। ফলে তাকে নিয়ে কেউ সন্দেহ করার অবকাশ পেত না।
নাফিসের ব্যবহৃত গাড়ি
নাফিসের শয়নকক্ষে রয়েছে গোপন ক্যামেরা। মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে এসব ক্যামেরায় তিনি অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ধারণ করতেন। এ ধরনের অসংখ্য অশ্লীল ছবি, ভিডিও ও তথ্য তার মোবাইল ফোন ও হার্ডডিস্ক থেকে পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নাফিজের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাও হয়েছে। মামলার নথিতে নাফিজ ডন নামে তার নাম উল্লেখ আছে।
আটক রাত্রি খান নাফিজের মাদক কারবারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।