ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গানের দল মেঘদলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ করেছে সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সমানে এ প্রতিবাদের আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা গান, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
সমাবেশ থেকে বাউল শিল্পী রিতা দেওয়ান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া রহমান, অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহার সর্বোপরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনই বাতিলের দাবি জানানো হয়।
প্রতিবাদে গণ সাংস্কৃতিক মৈত্রীর পক্ষ থেকে যৌথ গান পরিবেশন করেন স্বর্ণা শীল এবং অদিতি আদৃতি। আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পি শাকিল ইমাম উঝান, ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী আদিত্য শুভ, দীপক সুমন এবং হোসাইন শেখ। বাঁশি বাজিয়ে প্রতিবাদে অংশ নেন আদিত্য শুভ।
ব্যান্ড দল সহজিয়া প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করেন।
প্রতিবাদে অংশ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি কে এম মুক্তাকী বলেন, ‘একজন আইনজীবী মেঘদলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কিন্তু এজাহারে তিনি স্পষ্ট করতে পারলেন না কীভাবে মেঘদল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। আর আদালত মামলাটির গুরুত্ব আছে কী নেই না দেখেই তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়ে দিল।’
এসময় তিনি মেঘদলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
মুক্তাকী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং জামিনের অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তাদের দমানোর জন্যই এ ধরনের আইন তৈরি করা হয়। কিন্তু যতই এ ধরনের আইন তৈরি করা হোক মানুষের কন্ঠ রোধ করা যাবে না।’
ছাত্র ইউনিয়নের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক শাওন বিশ্বাস বলেন, ‘কোন ঘটনা ঘটলেই এই সরকার বিজোড় সংখ্যার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সরকারের শুধু তদন্ত কমিটি করার হিম্মতই রয়েছে কিন্তু বিচার করার হিম্মত নেই। আমরা এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বাতিল চাই।’
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগরের সদস্য প্রিজন ফকির বলেন, ‘মেঘদলের যে গানের জন্য মামলা করা হয়েছে সে গানটি অন্তত দশ পনেরো বছর আগের গান। তাহলে এতোদিন এটা নিয়ে কথা উঠেনি কেনো? এখন কেনো মামলা করা হচ্ছে? মূলত সাম্প্রদায়িক হামলার জের ধরে এ মামলা হয়েছে। এসব সাম্প্রদায়িক হামলার পর তারা গানগুলো আটকে দেয়ার সাহস পেয়েছে। আমরা মেঘদলের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার চাই।’
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মেঘদলের বিরুদ্ধে করা মামলা পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) গত ৩১ অক্টোবর তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে ‘সহিংসতার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে কনসার্ট। ছবি: সিমু নাসের
রোববার ঢাকার মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ১ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেন।
এর আগে ২৮ অক্টোবর মেঘদলের সাত সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন ইমরুল হাসান নামে এক আইনজীবী। আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে আদেশের জন্য রোববার মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন বিচারক।
মামলায় মেঘদলের ভোকাল শিবু কুমার শিল, মেজবা-উর রহমান সুমন, গিটারিস্ট ভোকাল রাশিদ শরীফ শোয়েব, বেজ গিটারিস্ট এম জি কিবরিয়া, ড্রামার আমজাদ হোসেন, কিবোর্ডিস্ট তানভির দাউদ রনি, বাঁশিবাদক সৌরভ সরকারকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী নিজে নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অভিযোগে ইমরুল হাসান জানান, ২৬ অক্টোবর তিনি বাসায় অবস্থানের সময় সকাল ৭টার দিকে ইউটিউবে এ ঢোকেন। বিভিন্ন ভিডিও দেখার সময় দেখতে পান প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর একটি দোয়া বা ইসলামি প্রার্থনা তথা তালবিয়া নিয়ে ইসলামে নিষিদ্ধ বাদ্যবাজনা তথা আধুনিক মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে বিকৃত সুরে গান আকারে গাওয়া হচ্ছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গানের অনুষ্ঠানটি টিএসসিতে ভাস্কর্যের সামনে করা এবং পেছনে সাইনবোর্ড আকারে লেখা ছিল সহিংসতা। গানের মধ্যে আরও দেখা যায় যে, পবিত্র কালিমার অংশও গানের তালে পাঠ করা হয়। এ গান তার ধর্মানুভূতিতে আঘাত হেনেছে। এজন্য তিনি মামলার আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মেঘদলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বলে জানান ইমরুল হাসান। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় তিনি কদমতলী থানায় মামলা করতে যান। তবে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ না করে তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়।