ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে বাস ভাড়া ‘যৌক্তিক হারে’ বাড়ানোর দাবি নিয়ে মালিক সমিতির চিঠি পেয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক ডেকেছে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ। আগামী রোববার বিআরটিএর কার্যালয়ে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার বিআরটিএর চেয়ারম্যানের কাছে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানোর পর এ সিদ্ধান্ত হয়।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার বেলা ১১টায় ভাড়া নির্ধারণ সমন্বয় কমিটির বৈঠক হবে। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
গত রাত ১২টা থেকেই সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। ২৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় এরই মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিকরা পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ট্রাকের পাশাপাশি বাস ধর্মঘটও ডাকা হয়েছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে বাসমালিকরা এ ধরনের কর্মসূচিতে না গেলেও বিভিন্ন জেলায় বাস নামাচ্ছেন না মালিকরা। তেলের দাম বাড়ায় বর্তমান ভাড়ায় চালালে লোকসান হবে বলে তাদের বক্তব্য। কোথাও কোথাও এরই মধ্যে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ মিলছে।
বাস ভাড়া বাড়াতে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে দেয়া বাসমালিকদের চিঠি
এর মধ্যে বাসমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে ‘যৌক্তিক হারে’ ভাড়া বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছে।
বাস ভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএর একটি কমিটি আছে। সবশেষ ২০১৫ সালে এই কমিটি ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে। এরপর আট বছর একই হারে ভাড়া ছিল।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরসহ সারা দেশের দূরপাল্লার রুটে গত ৮ বছর কোনো ভাড়া বাড়ানো হয়নি। কিন্তু এ সময়ে গাড়ির চেসিস, টায়ার, টিউব, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের কর ও ফি বেড়েছে। এ কারণে গাড়ির পরিচালন ব্যয় ‘কয়েক গুণ’ বেড়ে গেছে।
তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘বাস ভাড়া বৃদ্ধির জন্য আমরা আপনাদের বারবার আবেদন করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক হারে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
‘ডিজেলের দাম বাড়ায় গাড়ি চালিয়ে মালিকদের কোনো লাভ হবে না। তেলের দাম ওঠাতেই হিমশিম খেতে হবে।’
চিঠিতে বলা হয়, সারা দেশের বাসমালিকরা মনে করেন, অবিলম্বে বাস ভাড়া না বাড়ানো হলে গাড়ি চালানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
বাস-ট্রাকমালিকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছে।
সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ বলেন, ‘তেলের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে ভাড়া না বাড়ালে আমাদের পক্ষে গাড়ি চালানো কঠিন।’
বিআরটিএ কিলোমিটার হিসাব করে বাস ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও ট্রাক ভাড়ার বিষয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি জানা যায় না। এই গাড়িগুলো সাধারণত, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে দরদাম করে করা হয়।
২০১৫ সালে শেষবার বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। সে সময় দূরপাল্লার বাসের প্রতি কিলোমিটার ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা।
এ ছাড়া ঢাকা শহরে প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতি কিলোমিটার বাসের ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
তবে শুরু থেকেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আছে। বিআরটিএ নানা সময় ঘোষণা দিলেও যাত্রী ঠকানো বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।