১৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেছেন পোশাক কারখানা শ্রমিক আছমা আক্তার। নিজের বা পরিবারের সদস্যদের যে কোনো অসুস্থতায় তিনি বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা পেতে সাভারের কাতলাপুরের এই ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারে আসেন। এখানে চিকিৎসকের পরামর্শ নয়, মেলে প্রয়োজনীয় ওষুধও।
আছমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের গার্মেন্টসেও ডাক্তার আছেন। কারখানায় আগে মাসে একদিন আমাদের ডেকে প্রেশার মাপত, কিন্তু কোনো ওষুধ দিত না। এখানে আমি ওষুধও পাচ্ছি। আমার বাচ্চা হওয়ার পর বাচ্চার চিকিৎসাও পাই এখান থেকে।’
আছমার মতো এলাকার নয়টি পোশাক কারখানার শ্রমিক ও তাদের পরিবার ব্র্যাকের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার থেকে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে আরও কিছু সহায়তাও দিচ্ছে ব্র্যাক।
আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় ব্র্যাক ঢাকার আশপাশে তিনটি জায়গায় চার বছর আগে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করে এ প্রকল্প।
এমপাওয়ারিং দ্য রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার লিভিং ইন আরবান স্লামস অফ ঢাকা নামের এ প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসাসহ কয়েকটি সেবা দেয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের লক্ষ্য, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও আইনি সেবা দেয়া, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আর্থিক সক্ষমতা তৈরির সুযোগ সৃষ্টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক শ্রমিকদের শারীরিক ও আইনি সমস্যা থেকে যত দূরে রাখা যাবে, কারখানায় তত কর্মদক্ষতা বাড়বে। অসুস্থতা বা অন্য কারণে কারখানায় অনুপস্থিতির ঘটনাও কমবে। এতে কারখানা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকের উপার্জন বাড়বে।
পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুরে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করেছে ব্র্যাক। প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,এসব জায়গার মোট ২৯টি কারখানার ৫০ হাজার শ্রমিককে সেবা দেয়ার লক্ষ্য থাকলেও গত আগস্ট পর্যন্ত সেবা পেয়েছেন ৫৬ হাজার ১২৭ জন।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক মজিবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আরএমজি শ্রমিকদের এক ছাতার নিচে অনেকগুলো সার্ভিস দেই। বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ, আইনি সহায়তা, ডিপিএস, হেলথ ইন্স্যুরেন্স, বিকাশের সেবা আমরা দেই।
‘এক জায়গা থেকে এত ধরনের সেবা দেয়ার কারণ, শ্রমিকরা অনেক ব্যস্ত থাকেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করা তাদের জন্য কঠিন। এখানে এসে তারা সব রকমের সুবিধা পাচ্ছেন। এই সেন্টার শনিবার ছাড়া সপ্তাহের আর সব দিন খোলা থাকে।’
সাভারের কেন্দ্রটি সম্পর্কে মজিবুল হক বলেন, ‘আমরা সাভার পৌর মেয়রের মাধ্যমে এ এলাকার নয়টি কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানকার শ্রমিকদের যুক্ত করেছি। কারখানাগুলো আমাদের সার্ভিস সেন্টারের তিন কিলোমিটারের মধ্যে। তাই শ্রমিকদের যাতায়াত বা যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হয় না।’
মো. মাহাবুব নামের এক শ্রমিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখানে এসে ডিপোজিট আর হেলথ ইন্স্যুরেন্স করেছি। আমিও টাকা দেই, ব্র্যাকও টাকা দেয়। ডিপোজিটের জন্য আমি ১০০ টাকা দেই, ব্র্যাকও ১০০ টাকা দেয়। এক বছর তারা এভাবে দেবে। তারপর শুধু আমাকে চালাতে হবে।
‘এখান থেকে এক বছর মেয়াদি হেলথ কার্ড দিয়েছে। এটি দেখিয়ে ফ্রি চিকিৎসা পাওয়া যায়। আর অবস্থা বেশি খারাপ হলে তারা হাসপাতালে পাঠায়।’
সাভার পৌরসভার মেয়র আবদুল গনিসাভার পৌরসভার মেয়র আবদুল গনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটি শিল্প অঞ্চল। এখানে অনেক শিল্প কারখানা, বিশেষ করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে। ব্র্যাক এখানে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে গার্মেন্টসে মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করছে।
‘তারা বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেয়ার জন্য একজন এমবিবিএস ডাক্তার রেখেছে। বিনা মূল্যে ওষুধও দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বস্তির মানুষের জন্য পানির ব্যবস্থা, আবর্জনা পরিবহনের জন্য ভ্যান দিয়েছে।’
পরীক্ষামূলক প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হলেও বিদেশি দাতা সংস্থার তহবিল থেকে যাওয়ায় আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রকল্প ব্যবস্থাপক মজিবুল হক।
তিনি বলেন, ‘আশা করছি, এরপর এটি মূল প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করা যাবে।’
প্রকল্পের মাঠ কার্যক্রম ব্যবস্থাপক রেজভিনা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনও প্রকল্পের মূল্যায়ন করিনি। প্রকল্পের শেষ দিকে এই মূল্যায়ন করে আওতা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’