লিটারে ১৫ টাকা দর বাড়ার কারণে পরিবহন খাতে ভাড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা এমনিতে বেড়ে যাওয়া নিত্যপণ্যের বাজারে নতুন করে ভয় দেখাচ্ছে।
গত রাত ১২টায় তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। যে ডিজেল আগে ৬৫ টাকা লিটারে পাওয়া যেত, সেটি এখন কেনা হচ্ছে ৮০ টাকায়। সিদ্ধান্ত আসার আগেই বেশির ভাগ ট্রাকভাড়ার চুক্তি হয়ে যায়। ফলে বাড়তি খরচের চাপ এখনও পড়েনি বাজারে। তবে ক্রেতার মনে ঢুকেছে ভয়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যখন কাঁচাবাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছিল, তখনও আলোচনায় ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি। দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে এমন আভাসও দিয়ে রাখেন অর্থমন্ত্রী। আর জ্বালানি মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার থেকে নতুন দাম কার্যকর করলেও অনেক আগে থেকেই বেড়ে গিয়েছিল পরিবহন ব্যয়।
ফলে খাদ্যপণ্যের সঙ্গে বাড়তি পরিবহন ব্যয় যোগ হওয়ায় স্বাভাবিক দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের।
এখন যেহেতু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে, ফলে আরও এক দফা দাম বাড়ার শঙ্কায় ক্রেতারা।
খিলগাঁও কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা আব্দুর রহমান বলেন, ‘শীতের নতুন সবজি হিসেবে দাম একটু বেশি থাকবে এটাও সত্য। কিন্তু এত বেশি দাম হবে কেন? টম্যাটো আরও এক মাস আগ থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। দাম কমার চেয়ে বরং প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন যে সময় তাতে বাজারে কাঁচা টম্যাটোর দাম কম হওয়ার কথা আর পাকা টম্যাটোর দাম বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু পুরোটাই উল্টো।’
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে এনে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। আর এখন তো তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফলে আরও এক দফা বাড়তি দামে পণ্য কেনার প্রস্তুতি নিতে হবে।’
বিক্রেতারাও বলছেন, দাম বেড়ে যাবে।
খিলগাঁও বাজারে সবজি বিক্রেতা লালন মিয়া বলেন, ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে পাইকারি বাজারে সবজি আসে। ডিজেলের দাম বাড়ায় বলা যায় পরিবহন খরচ বাড়বে। যদিও অনেক আগ থেকেই বাড়তি দামে পণ্য কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে।
একই বক্তব্য ছিল বাসাবো কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মো. ইব্রাহিমের। পরিবহন খরচ বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে আগে যে পাতাকপি পাওয়া যেত ১৫ টাকায়, এখন সেটি ২০ টাকা। ফলে সেখান থেকে কিনে এনে সব ধরনের খরচ যোগ করে ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না।
আগের সপ্তাহে তিনি শিম বিক্রি করেছেন ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। এখন যে দাম তাতে ১৪০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর বাজারসহ অলিগলিতে যেসব ভ্যানে সবজি বিক্রি করা হয়, সেটিও এখন অনেকটা কমে গেছে। বেশি দাম হওয়ায় এখন ক্রেতারা ভ্যান থেকে সবজি কিনতে আগ্রহী হন না।
দক্ষিণ গোড়ানের বাগানবাড়ি কাঁচাবাজারে পণ্য বিক্রির জন্য আসেন মূলত ভ্যানে সবজি বিক্রেতারা। বাজার ভেঙে গেলে সেসব ভ্যান নিয়ে অলিগলিতে বিক্রি করেন তারা। কিন্তু এখন সেই ভ্যানের সংখ্যাও কমে গেছে।
রাসেল নামের এক বিক্রেতা বলেন, ভ্যানের সবজির দাম কম হবে এমন ধারণা থেকেই মূলত ক্রেতারা পণ্য কেনেন। কিন্তু পাইকারি বাজার থেকেই তাদের এখন অনেক বেশি দামে সবজি কিনতে হয়। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
তিনি বলেন, ক্রেতারা দাম জিজ্ঞেস করে চলে যান।