হত্যা মামলায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে চার বছর আগে আব্দুল মোকিম ও গোলাম রসুল ঝড়ু নামে দুজনের ফাঁসি কার্যকরে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তার মতে, আসামি দুজনের ফাঁসি নিয়ে বিভ্রান্তিটা হয়েছে মামলা ব্যবস্থাপনায় অ্যানালগ সিস্টেমের কারণে।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাতে আসামি দুজনের ফাঁসি হয়। মোকিম ও ঝড়ু চরমপন্থি দল পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির বুধবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, হাইকোর্ট ফাঁসির আদেশ দিলে এর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে আপিল করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর সেটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে। তখন পরিবার সূত্রে তিনি জানতে পারেন চার বছর আগেই আসামি দুজনের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে।
বিষয়টি নজরে এসেছে বলে বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। বললেন, এ ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে মামলা ব্যবস্থাপনায় অ্যানালগ সিস্টেমের কারণে এমনটা হয়ে থাকতে পারে।
এ এম আমিন উদ্দিন, ‘গতকাল (বুধবার) বিষয়টি নিয়ে পত্র পত্রিকায় দেখলাম, আজকে সে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, আসামি জেল থেকে যে আপিল দায়ের করেছিল যে আপিলের নম্বর ছিল ০৩/২০১৬। যে আপিলটি সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর রায়ের মাধ্যমে আপিলটি খারিজ করে দেন। কিন্তু আসামিরা দায়ের করা আরেকটি আপিল যেটা গতকাল তালিকায় ছিল।
‘সমস্যা হয়েছে কি, সংবিধান সংশোধনের ফলে আপিলগুলার লিভ পিটিশন শুনানি হয় না, সরাসরি আপিল হয়। যার কারণে ওই আপিলটা পড়েছিল। কিন্তু তাদের আইনজীবীদের উচিত ছিল দুইটা আপিল এক সঙ্গে শুনানি করা, বা আদালতের দৃষ্টিতে নিয়ে আসা। যেহেতু তারা আদালতের দৃষ্টিতে আনেননি। সে কারণে তাদের যে জেল আপিলটা ছিল সেটা সুপ্রিমকোর্টের ফুল কোর্টে শুনানি হয়ে ডিসমিস (খারিজ) হয়। তারপর তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেন সেটাও খারিজ হলো। তারপর স্বাভাবিকভাবেই দণ্ড কার্যকর হলো।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘আর এই যে আপিলটা ছিল, এটা যেহেতু আলাদা রয়েছে, এটা যেহেতু ট্যাগ করা হয়নি, এই কারণে রয়ে গেছে। তাদের বিচার তো হয়ে গেছে। আদালত সব কিছু শুনেই খারিজ করে গেছে।’
এখানে গ্যাপ কীভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো অ্যানালগ সিস্টেম, ডিজিটাল হয়নি। আশা করছি, সিস্টেম ডিজিটাইলাইজড হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।’
বিষয়টি নজরে আনা আইনজীবীদেরও দায়িত্ব ছিল বলে মনে করেন এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আইনজীবীদের দায়িত্ব ছিল, এটি আদালতের নজরে আনা যে, জেল আপিলের সঙ্গে আরেকটা আপিল রয়েছে। যে ঘটনার আমরা প্রায়ই সম্মুখিন হই। অনেক সময় দেখা যায়, জেল আপিল আসে না। তখন সাত দিন সময় দেয়া হয়।
‘পাঁচটা আপিল থাকলেও রায় তো একটাই হবে। সব গুণাগুণ দেখেই আদালত রায় দিয়েছে। ফাঁসি কার্যকরে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।’