নরসিংদী সদরের আলোকবালি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ হাসপাতাল থেকে একজনকে আটক করেছে।
নরসিংদী থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) এক কর্মকর্তা। তবে তার নাম এখনও জানা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, আলোকবালি ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে সংঘর্ষ হয়। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে হামলা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদউল্লাহর সমর্থকরা।
এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪৫ বছর বয়সী আমির হোসেন, ২২ বছর বয়সী আশরাফুল হক ও ৫০ বছর বয়সী খুশি বেগম নিহত হন। মেম্বার প্রার্থী আবু খায়েরসহ আহত হন অন্তত ৪০ জন।
গুরুতর আহত ১০ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত মমিন আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকালবেলা হঠাৎ শুনি গুলির শব্দ। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি কাইয়ুম ও রিপনের নেতৃত্বে শত শত লোক অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িঘরে হামলা করতে এসেছে। তারা অনেক বাড়িতে ভাঙচুর করেছে ও আগুন দিয়েছে।’
এই হামলা ও হতাহতের জন্য পুলিশকে দায়ী করেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুন হাসান।
তার অভিযোগ, ‘হামলা হতে পারে, এই বিষয়টি পুলিশকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের জন্যই এতগুলো লোক মারা গেল। সংঘর্ষের সময়ও আমরা পুলিশকে ফোন দিয়েছি। তারা আসেনি।’
এই অভিযোগ অস্বীকার করে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, ‘রাতে যে সময় পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল, তখন যাওয়া সম্ভব হয়নি। সকালে পুলিশ সেখানে যাওয়ার আগেই হামলা হয়। আমরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।’
আসাদউল্লাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামেন। পরে দলীয় চাপে ২৬ অক্টোবর তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
তার মনোনয়ন প্রত্যাহারে দীপুর সমর্থকরা ওই দিন দুপুরে আনন্দ মিছিল বের করলে আসাদউল্লাহর সমর্থকদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ও গুলি ছোড়ে। এতে দুই পক্ষেরই পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হন।
চেয়ারম্যান প্রার্থী দীপু বলেন, ‘আসাদউল্লাহ ভাই আমাকে সমর্থন জানিয়ে মনোনয়ন তুলে নেয়ায় ভেবেছিলাম তারা আমার সঙ্গে মিলে গেছে। তবে আসলে তা হয়নি। তারা আমাকে মেনে নিতে পারছে না। নানা অজুহাতে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে চারজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’
তবে আসাদউল্লাহ বলছেন এই হামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি বলেন, ‘আমি দীপুকে সমর্থন জানিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। গ্রামে যেন ঝগড়া না হয়, সে জন্য দলের ঊর্ধ্বতন নেতা ও পুলিশের সঙ্গে বসেছি। তাদের সহযোগিতাও চেয়েছি। সকালে দুই মেম্বারের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষে আমির হোসেন নামে আমার একজন আত্মীয়ও মারা গেছেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।