আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) মধ্যে আরও ১০৯টি ফায়ার স্টেশন চালু করা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এর ফলে দেশে স্টেশনের সংখ্যা হবে ৫৬৫টি।
তিনি বলেছেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের শিল্পঘন এলাকা এবং পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ১১টি আধুনিক ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের গ্যাপ এরিয়ায় আরও ১৫৫টি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে।
‘মুজিববর্ষে শপথ করি, দুর্যোগে জীবন-সম্পদ রক্ষা করি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহের উদ্বোধনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বক্তব্যে ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন মন্ত্রী।
জনবল বৃদ্ধি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের জনবল বৃদ্ধিতে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি। ২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানের মোট জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজার ১৭৫ জন। বর্তমানে এই জনবল হয়েছে ১৩ হাজার ৪০০ জন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে জনবলের সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
‘এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ২৫ হাজারে উন্নীত করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।’
দক্ষতা-সক্ষমতা বৃদ্ধি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও আমরা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ১৬৯ জন সদস্যকে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে বিশ্বমানের সুবিধা সংবলিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এ জন্য মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ১০০.৯২ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
‘এই একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে এখানে একসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের এক হাজার সদস্যকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে। এখন যেমন আমাদের ফায়ারকর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে হচ্ছে, এই একাডেমি হলে আমরা বিদেশের লোক এখানে এনে উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে পারব। ফায়ার সার্ভিসের সেই সক্ষমতা সৃষ্টি হবে।’
অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা উন্নত দেশের কাতারে নেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান কামাল।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে যেখানে ফায়ার সার্ভিসের বহুতল ভবনে কাজ করার মতো একটি ৪৭ মিটারের পুরোনো গাড়ি ছিল, সেখানে আমরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বহুতল ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধারের মোট ২১টি উঁচু মইয়ের গাড়ি এনেছি। ফায়ার সার্ভিসের এখন ৬৪ মিটার বা ২০ তলা পর্যন্ত অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করার সক্ষমতা হয়েছে।
‘এ ছাড়া ৬৮ মিটার উচ্চতার লেডার সংবলিত গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা ২২ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।’
‘গুরুত্ব বাড়ছে ফায়ার সার্ভিসের’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, ‘প্রতিটি দেশে দিন দিন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এ জন্য সরকারে আসার পর থেকেই আমরা এই প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার সময় দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০৪টি। বর্তমানে দেশে চালু ফায়ার স্টেশন হলো ৪৫৬টি।
‘অর্থাৎ আমাদের সরকারের সময়ে দেশে নতুন ২৫২টি ফায়ার স্টেশন চালু করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যে আরও ১০৯টি নতুন ফায়ার স্টেশন চালু করা হবে। তখন ফায়ার স্টেশনের মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬৫টি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের শিল্পঘন এলাকা এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় ১১টি মডার্ন ফায়ার স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ নির্দেশনা মতে দেশের গ্যাপ এরিয়ায় আরও ১৫৫টি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যে তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা ৭২০টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পা রাখার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা ৬৩টি থেকে ১৯০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের সব স্টেশনে পর্যায়ক্রমে অ্যাম্বুলেন্স দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কেমিক্যাল টেন্ডার, হাজমত টেন্ডার, এমনকি আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধার রিমোট কন্ট্রোল ফায়ারফাইটিং ইউনিট এবং ড্রোন পর্যন্ত আমরা এনেছি, যা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও ব্যবহৃত হয়। ‘এ ছাড়া বিশেষ পানিবাহী গাড়ি ও কেমিক্যাল টেন্ডারসহ বিশেষ ধরনের গাড়ি ছিল মাত্র ৫টি। আর এখন আধুনিক সুবিধা আছে এমন বিভিন্ন ধরনের বিশেষ গাড়ির সংখ্যাই ১০৮টি।’
পূর্ণাঙ্গ রেশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন
ফায়ার সার্ভিসের সব সদস্যের জন্য পূর্ণাঙ্গ রেশন বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের জন্য প্রতি মাসে পাঁচ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত ঝুঁকিভাতা চালু করেছি। কর্মীদের জন্য তিন রঙের মর্যাদাপূর্ণ নতুন পোশাক প্রবর্তন করা হয়েছে। পদকের সংখ্যা আটটি থেকে বৃদ্ধি করে ৫০টি এবং সম্মানী ১০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এক লাখ টাকা করা হয়েছে।
‘ফায়ারম্যানসহ পাঁচটি পদের বেতন ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আমরা আজীবন রেশন সুবিধার আওতায় আনার কথা চিন্তা করছি। সকল জেলায় ফায়ার সার্ভিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদ সৃজনসহ এই প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও যা যা প্রয়োজনীয়, আমরা পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করব।’
‘প্রতিষ্ঠানটি দুঃসময়ের বন্ধু’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সক্ষমতা বাড়ানোর কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জান-মাল রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারা জানেন, সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানের তিনজন কর্মী অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের সময় মারা গিয়েছেন। রাজশাহীতে জঙ্গি দমন অভিযানে ফায়ারফাইটার আব্দুল মতিন, বনানীর এফআর টাওয়ারে ফায়ারফাইটার সোহেল রানা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছিলেন। সবশেষ দিনাজপুরে ডুবন্ত লোক উদ্ধার করতে গিয়ে ডুবুরি মতিন মৃত্যুবরণ করেছেন।
‘এসব কারণে একসময় দমকল বলে অবহেলা করলেও এখন সবাই প্রতিষ্ঠানটিকে দুঃসময়ের বন্ধু মনে করে। আমি মনে করি, মানুষের দোরগোড়ায় অগ্নিনিরাপত্তার সেবা পৌঁছে দেয়ার যে স্বপ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখতেন, ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’