বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ‘আইনের অধ্যাপকের জন্য নয়’

  •    
  • ৪ নভেম্বর, ২০২১ ১১:২৪

একমাত্র অধ্যাপক দেখিয়ে এক যুগ ধরে ‍আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সরকার আলী আক্কাস। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, সহযোগী অধ্যাপকদের চেয়ারম্যান করা যাবে। একই কারণ দেখিয়ে পাঁচ মেয়াদের মধ্যে চার মেয়াদে ডিন নির্বাচন করা হয়েছে তাকে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এটা বারণ। একসঙ্গে দুটি দায়িত্বেও বাধা আছে, কিন্তু অধ্যাপক সরকার আলী আক্কাসের জন্য আইন অমান্য করে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে টানা পঞ্চমবারের মতো বিভাগীয় চেয়ারম্যান করা হয়েছে অধ্যাপক সরকার আলী আক্কাসকে। ১২ বছর পদ ধরে রাখায় তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অমান্যের অভিযোগ উঠেছে।

কেবল এই বিষয়টিই নয়, আইন অমান্য করে পর পর তিনবার বিভাগীয় ডিন হয়েছেন তিনি। চতুর্থবার যখন তাকে ডিন করা হয়, তখন একজন আপত্তি দিলে বিষয়টি আটকে যায়। কিন্তু দুই বছর পর আবার একই পদে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।

এখানেই শেষ নয়, আইন অনুযায়ী যেসব দায়িত্বের জন্য শিক্ষকদের বাড়তি টাকা দেয়া হয়, সেগুলোর দুটি একসঙ্গে পেতে পারেন না শিক্ষকরা, কিন্তু অধ্যাপক আক্কাস একই সঙ্গে দুটি দায়িত্ব পেয়েছেন।

এই শিক্ষক বলছেন, তিনি নিজে নিজে দায়িত্ব নেননি। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উপাচার্য বলছেন, আইনের বাইরে কিছু করা হয়নি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বিধি স্মরণ করালে তিনি বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন।

২০০৯ সালের ১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন অধ্যাপক আক্কাস। তখন থেকেই বিভাগের চেয়ারম্যান তিনি। বিভাগে অধ্যাপক তিনি একাই। আর এ কারণ দেখিয়ে তাকে বারবার একই পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

তবে বিভাগে দুজন সহযোগী অধ্যাপক আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী অধ্যাপক না থাকলে সহযোগী অধ্যাপককে বিভাগের চেয়ারম্যান করা যাবে, কিন্তু সেটি বিবেচনায় আনা হচ্ছে না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন (২০০৫)-এর ২৪ নং ধারার ২ নং উপধারায় বলা আছে, বিভাগীয় অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিন বছর মেয়াদে বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন।

২৪ নং ধারার ৩ নং উপধারায় বলা আছে, যদি কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকেন, তাহলে সহযোগী অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে একজনকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবেন উপাচার্য।

বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদারও কোনো শিক্ষক না থাকলে বিভাগের প্রবীণতম শিক্ষক এর চেয়ারম্যান হবেন বলেও আইনে বলা আছে।

আইন বিভাগের শিক্ষকরা বলছেন, এই আইন অনুযায়ী, বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক থাকায় অধ্যাপক আক্কাস বারবার বিভাগীয় চেয়ারম্যান হতে পারেন না, কিন্তু তিনি তা-ই হয়ে আসছেন।

আবার পরপর দুই মেয়াদে ডিনের দায়িত্ব পালনের নিয়ম না থাকলেও অধ্যাপক আক্কাস পর পর তিনবার ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০১২ সালের ৯ মে থেকে ২০১৮ সালের ৮ মে পর্যন্ত আক্কাস এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর চতুর্থবার ডিন হতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক খ্রিস্টান রিচার্ডসন উপাচার্যকে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি দেন। এরপর নিয়োগ আটকে গেলেও দুই বছর পর অধ্যাপক আক্কাস চতুর্থবার ডিন হিসেবে দায়িত্ব পান।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন (২০০৫)-এর ২২ নং ধারার ৫ নং উপধারায় বলা আছে, উপাচার্য সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে প্রত্যেক অনুষদের জন্য বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দুই বছর মেয়াদের জন্য ডিন নিযুক্ত করবেন। তবে কোনো ডিন পর পর দুই মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হতে পারবেন না।

কোনো বিভাগে অধ্যাপক না থাকলে সেই বিভাগের জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক ডিন পদে নিয়োগ পাবেন এবং কোনো বিভাগের একজন অধ্যাপক ডিনের দায়িত্ব পালন করলে ওই বিভাগের পরবর্তী পালায় অবশিষ্ট অধ্যাপকরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ডিন পদে দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ১৭(২) ধারায় বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব দায়িত্বের জন্য আর্থিক সুবিধা দেয়া যাবে, সেগুলোর একাধিক দায়িত্ব কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে দেয়া যাবে না।

এ ক্ষেত্রেও সরকার আলী আক্কাসের নিয়োগে আইন অমান্য হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ বিষয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের চেয়ারম্যান খ্রিস্টান রিচার্ডসন বলেন, ‘আইন অনুষদের ডিন হওয়ার বিষয় নিয়ে আমি একবার অভিযোগ করেছিলাম। তখন বিষয়টি সমাধান করেছিলেন উপাচার্য স্যার। যেহেতু এটা বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয়, শিক্ষকরা চাইলেই সমাধান করতে পারবেন।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস বলেন, ‘নিয়োগ তো আমি দিই না, বিশ্ববিদ্যালয় দেয়। আর বিশ্ববিদ্যালয় আইন মেনেই নিয়োগ দেয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগ এভাবেই চলছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন।’

সহযোগী অধ্যাপক থাকার পরও অধ্যাপক আক্বাস কীভাবে বারবার চেয়ারম্যান হচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে বলেন রেজিস্ট্রার।

পরে উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, ‘বিভাগের অধ্যাপক থাকলে তিনিই চেয়ারম্যান হবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ২৪ নং ধারার ২ ও ৩ উপধারার কথা স্মরণ করালে উপাচার্য জবাব না দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি দেখব।’

এ বিভাগের আরো খবর