বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মন্ত্রী-এমপির ঘরেই বিদ্রোহী

  •    
  • ৪ নভেম্বর, ২০২১ ১১:১৮

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট হতে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে শুরুতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০০। পরে অবশ্য বেশকিছু বিদ্রোহী প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তারপরও বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকা বেশ দীর্ঘ। তাদের মধ্যে আছেন দলীয় মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়স্বজনরাও।

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে ‘দুর্বিষহ’ অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। দেশজুড়ে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এদের মধ্যে আছেন দলীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের আত্মীয়স্বজনসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা। বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করার পরও তারা সরে দাঁড়াননি।

অন্যদিকে কেন্দ্রের শাস্তির কঠোর বার্তার পরও বেশ কয়েকটি জায়গায় নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিদ্রোহী দমনে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সরাতে বহিষ্কার ছাড়া আর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট হতে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে শুরুতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০০। পরে অবশ্য বেশকিছু বিদ্রোহী প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তারপরও বিদ্রোহী প্রার্থীর তালিকা বেশ দীর্ঘ। তাদের মধ্যে আছেন দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন ও উপজেলার প্রভাবশালী নেতারা।

বিদ্রোহী প্রার্থী হলে ভবিষ্যতে কখনও দলীয় প্রতীক পাবেন না- আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে এমন ঘোষণার পরও বিদ্রোহীরা থেমে নেই। বেশকিছু ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দলের উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারাও।

রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার ১৬টি ইউপিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তানোরের কলমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। এখানে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর চাচাতো ভাই ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খাদেকুন্নবী বাবু চৌধুরী।

পাবনা-২ আসনের (সুজানগর) সংসদ সদস্য ফিরোজ কবিরের ছোট ভাই আহমেদ ফেরদৌস কবির দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। অবশ্য পরে তিনি সরে দাঁড়ান। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে ওই উপজেলায় দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা করায় ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ১২ নেতা-কর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ১৫ জন। খট্টেশ্বর রাণীনগর সদর ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজমুল হক। গোনা ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আরিফ রাঙ্গা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আবু শায়েম শাহিন।

নওগাঁ সদর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তিনজন। চণ্ডিপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সদস্য বেদারুল ইসলাম মুকুল এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসলাম হোসেন।

শেরপুর সদর উপজেলার ১১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা।

দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমানের বড় ভাই ইসমাইল হোসেন কামারিয়া বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। একই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম সিদ্দিক। জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামও রোহা ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে লড়ছেন। জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুরুজও চরশেরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

লালমনিরহাটে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সাজেদা জামান। কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নে সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। সাজেদা জামান মন্ত্রীর ছোট ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহবুবুজ্জামান আহমেদের স্ত্রী। ওই উপজেলার মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

লালমনিরহাটের আদিতমারীর আটটি ইউপিতে নির্বাচন হবে। উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রোকনুজ্জামান, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মমতাজ উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় ১৮টি ইউপিতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই দুই উপজেলায় ১২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। তাদের মধ্যে মিরপুরেই ৯ জন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম সেন্টু, সহদপ্তর সম্পাদক নূরুল ইসলাম, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আলমগীর হোসেনও নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান জুনিয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার বিরুদ্ধে লড়ছেন। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মজিবুল হকও চাঁদগ্রাম ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

বহিষ্কারেও সরে দাঁড়াননি বিদ্রোহী প্রার্থীরা

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় নেত্রকোণার আটপাড়া ও বারহাট্টা উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১৮ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া সদর উপজেলার ১০ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ২৮ জনের একজনও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।

সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার সদর ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে। গত ২ নভেম্বরের ওই হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর চার কর্মী ও এক নারী সাংবাদিক আহত হন। এর আগে ৩১ অক্টোবর ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে পটুয়াখালীর বাউফলে। নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হয়।

এদিকে ইউপি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে চাননি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দলীয় ফোরামে বিষয়গুলো আলোচনার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব।’

বিদ্রোহী ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট সমাধানে কোনো কোনো জায়গায় চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই বিদ্রোহী দমনে আমরা কাজ করছি। হয়তো শতভাগ সফল হতে পারব না। তবে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। যেসব ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বেশি, সেখানে সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে মীমাংসা করা হচ্ছে। আর যেখানে পরিস্থিতি জটিল, সেখানে দলীয়ভাবে শাস্তির পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর