বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিকল্প শ্রমবাজার হিসেবে ইউরোপকে ভাবছে সরকার

  •    
  • ৪ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:৫৫

কোভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে তেলনির্ভর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজের সুযোগ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। এ কারণে বিকল্প বাজার হিসেবে ইউরোপকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ দেশগুলো দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিক নেবে। এতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেতনও বেশি পাবে তারা।

বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ইউরোপের বাজারে শ্রমশক্তি রপ্তানি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তি প্রয়োজন বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

এরই মধ্যে সার্বিয়া, যুগোস্লাভিয়া, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও রোমানিয়ায় ছোট পরিসরে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিক যাওয়া শুরু হয়েছে। অন্যদিকে দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে জি টু জি চুক্তির মাধ্যমে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী এবং সেভাবেই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বৈধ পথে ইউরোপের দেশ গ্রিস, মাল্টা, আলবেনিয়া, সার্বিয়া, যুগোস্লাভিয়া, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া ও মাল্টায় কর্মী পাঠাতে চায় সরকার। এ নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করা হচ্ছে, দেশগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হলে বিপুলসংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হবে।

সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নতুন যেসব দেশে সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ, বলকান অঞ্চল ও পূর্ব এশিয়া। গ্রিস, আলবেনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তান ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ের কথাও ভাবা হচ্ছে।’

গ্রিসের এথেন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ ‘সমদূরবর্তী রাষ্ট্রদূত’ হিসেবে আলবেনিয়া ও মাল্টারও দেখভাল করেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি এই তিনটি দেশে বৈধ উপায়ে কর্মী পাঠাতে চাই। তারা আমাদের দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেবে। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের এমওইউ ড্রাফট বা খসড়াগুলো তাদের কাছে পাঠাব, তখন তারা কাউন্টার বার্তা দেবে।

‘দেশগুলোতে কাজের পরিবেশ ভালো। বাংলাদেশিদকে তারা ভালো মনে করে। আমরা বৈধ উপায়ে যদি এটা করতে পারি, খুব ভালো হবে। ওদের কৃষি, কনস্ট্রাকশন, ফিশিং সেক্টরগুলোতে লোক দরকার। আমার মনে হয়, আমাদের অনেক কর্মী এখানে আসতে পারবে। কিন্তু কী পরিমাণ, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এটা এমওইউ স্বাক্ষরের পর বলা যাবে।’

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এসব দেশে কর্মী পাঠানোর পর কর্মীরা ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সে জন্য খুব হিসাব করেই সামনে এগোবে ঢাকা। কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো অবৈধ অভিবাসনের ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। আর বাংলাদেশও চায় না কোনো নাগরিক অবৈধভাবে ইউরোপোর দেশগুলোতে পাড়ি জমাক।

শ্রমিক নিতে চায় সার্বিয়া

গত অক্টোবরের শুরুতেই বেলগ্রেড সফরে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার ভুসিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় ভুসিক বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্যবস্থাপনায় দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নেয়ার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানান। এ জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া তৈরিতে জোর দেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্বিয়ার চলমান উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য যে বিপুল মানবসম্পদ প্রয়োজন, তা পূরণে বাংলাদেশের দক্ষ ও আধাদক্ষ আইটি পেশাজীবী, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বারদের (কলমিস্ত্রি) অনেক চাহিদা রয়েছে। আমি তাই বাংলাদেশ থেকে চাহিদা পূরণের প্রস্তাব দিই। এ প্রস্তাব সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সাদরে গ্রহণ করেন।’

৪০ হাজার শ্রমিক নেবে রোমানিয়া

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যাম সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে অক্টোবরের শুরুতে রোমানিয়াতেও যান। তার ওই সফরে দেশটিতে ৪০ হাজার শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়।

মোমেন বলেন, রোমানিয়া সরকারের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বিভিন্ন খাতে ৪০ হাজার শ্রমিক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, ‘এখন কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিক লাগবে, কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা দিতে পারব, সেটা বিবেচনা করা হবে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১ হাজার শ্রমিক পাঠানো হয়েছে।’

মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে রোমানিয়ার কোনো মিশন না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। শ্রমিক নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে মিশন থাকলে সুবিধা হবে। আমরা এখানে মিশন খোলার জন্য অনুরোধ করেছি।

‘বলকান যুদ্ধের সময় দুই দেশের মিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে মূল সমস্যা হচ্ছে ঢাকায় তাদের কোনো মিশন নাই। দেশটি দিল্লির মিশনকে কাজে লাগাতে চায়। তবে সে মিশনটাও ছোট। এর মধ্যে যারা আবেদন করেছেন, তাদের ওয়ার্ক পারমিট আসেনি। তাই কনস্যুলার সেবা ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’

মোমেন বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখবে। শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি হবে সরকার টু সরকারপর্যায়ে। বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

নতুন শ্রমবাজার কোথায়?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় সংসদকে জানান, দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, এর বাইরেও বিকল্প শ্রমবাজার খুঁজছে সরকার।

কোভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে তেলনির্ভর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজের সুযোগ কমে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে গত দেড় বছরে কয়েক লাখ শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। নতুন করে যাদের যাওয়ার কথা ছিল, সেই সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি মধ্যপ্রাচ্যের বাজার সামনে খারাপ হতে পারে। এ জন্য আমরা বিকল্প বাজার হিসেবে ইউরোপকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে তারা দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিক নেবে। এতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেতনও বেশি পাবে তারা।’

সম্ভাব্য নতুন গন্তব্য দেশ

সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শামসুল আলম জানান, নতুন যেসব দেশে সরকার শ্রমবাজার হিসেবে সম্ভাবনা দেখছে, তার মধ্যে ইউরোপ ছাড়াও মধ্য এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মরুভূমির চেয়ে এসব দেশে আবহাওয়া সহনীয়। তা ছাড়া এসব দেশে কাজগুলোর ধরন ভালো, শুধু ক্লিনারের কাজ না। বেতনও বেশি, আবার শ্রমিকদের অধিকারের পরিস্থিতিও ভালো।’

বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০২৫ সাল নাগাদ জাপান সারা বিশ্ব থেকে ৫ লাখ কর্মী নেবে। বাংলাদেশকে এই বাজার ধরতে হবে। যারা জাপানি ভাষা জানবে ও সেখানকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবে, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’

ভাষা ও দক্ষতায় বেশি লাভ

নতুন গন্তব্যের দেশগুলোতে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি শেখা নির্দিষ্ট কাজের বিশেষ দক্ষতা ওই কর্মীকে বেশি লাভবান করবে বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের। সেই সঙ্গে জানতে হবে ইংরেজি ভাষাও।

রামরুর নির্বাহী পরিচালক তাসনিম সিদ্দিকির মতে, কোনো দেশে যাওয়ার আগে কেবল দুই-তিন মাসের ক্র্যাশ কোর্স করে কখনই নতুন বাজার ধরা যাবে না। সে জন্য স্কুলপর্যায় থেকেই অন্যান্য দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করানো দরকার।

বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা, যেমন: ওয়েলডিং, ইলেকট্রনিক সামগ্রী মেরামত, গাড়ি মেরামত, বৈদ্যুতিক কাজ– এসব কাজের শিক্ষা মাধ্যমিক স্কুল পর্যায় থেকেই শুরু করার কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘নার্স ও ল্যাব টেকনিশিয়ান তৈরিতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে ভর্তুকি দিয়ে হলেও সরকারের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত। কৃষিকাজে যোগ দিতে হলে কৃষি যন্ত্রপাতি, গাছের আধুনিক উপায়ে পরিচর্যা, গাছ ও তার মৌসুম সম্পর্কে শিখতে হবে।’

ইউরোপে বৈধভাবে যাওয়ার সুযোগ নেই

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে এখন পর্যন্ত ইউরোপে বৈধভাবে শ্রমিক পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে কৃষি শ্রমিকসহ যারা যান, তারা একটা সিস্টেমের মাধ্যমে যান।

‘আমরা চেষ্টা করছি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এমওইউ করার, যাতে আমাদের শ্রমিকদের এখান থেকে বৈধভাবে পাঠাতে পারি।

‘ইউরোপে একটা সুবিধা আছে, ওখানে ইংরেজি মোটামুটি প্রচলিত। যে চাহিদা এই মুহূর্তে ইউরোপে আছে, নার্সসহ বিভিন্ন সেক্টরে, সেখানে কিন্তু যারা যাবে তাদের মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, ফলে ভাষাটা ভালোভাবে শিখে যেতে হবে। সেই হিসেবে আমরা ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছি এবং এর সঙ্গে ইউরোপের চাহিদা মোতাবেক সার্টিফিকেশন, এটা যদি আমরা এখান থেকে দিতে পারি এবং সেটা ওখানে যদি গ্রহণযোগ্য হয়, এমন উদ্যোগও কিন্তু আমরা হাতে নিয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর