করোনাভাইরাসের কারণে দেড় বছরের বেশি সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পর সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির সংখ্যা বেশ কম। ভবিষ্যতে যেন দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বাইরে না থাকে, সে জন্য ‘শিক্ষা টিভি’ অথবা শ্রেণিভিত্তিক একাধিক চ্যানেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এ পরিস্থিতিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাঠদানের বিকল্প নেই। এ ছাড়া ভবিষ্যতে যেকোনো বিপর্যয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট শিক্ষা চ্যানেল প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন।
গত আগস্টে অনুষ্ঠিত এনসিটিবি প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রমসংক্রান্ত ভার্চুয়াল সভায় শিক্ষা টিভি অথবা পৃথকভাবে ২৬টি চ্যানেল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষা চ্যানেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা কাজ শুরু করেছি।’
ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, এনসিটিবি প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাস ও বিভাগের জন্য আলাদা শিক্ষা টিভি অথবা শ্রেণিভিত্তিক পৃথক ২৬টি শিক্ষা চ্যানেল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শিক্ষা টিভি চ্যানেল স্থাপন কিংবা এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাস ও বিভাগের জন্য পৃথকভাবে মোট ২৬টি শিক্ষা চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচারের বিষয়ে অনাপত্তি প্রদান করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি প্রয়োজন।
‘তাছাড়া বিটিভি, বিটিভি চট্টগ্রাম, সংসদ টিভি এবং বিদ্যমান বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে কীভাবে পাঠদান কার্যক্রম সম্প্রচার করা যায়, সে বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর সারসংক্ষেপ পাঠানো যেতে পারে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, স্কুল-কলেজে সশরীরে পাঠদান শুরু হলেও শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির সংখ্যা বেশ কম। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা চিন্তিত। এ পরিস্থিতিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাঠদানের বিকল্প নেই। প্রাথমিকভাবে ৯টি লাইভ সেশন একযোগে পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য ঢাকায় পর্যাপ্তসংখ্যক এবং পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় ও জেলা শহরেও লেকচার স্টুডিও স্থাপন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আলাদা শিক্ষা টিভি প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তাই আপাতত আলাদাভাবে লাইভ সেশন সম্প্রচারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ২০২০ সালের ১৭ মার্চ সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এর প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরু হয়। তবে প্রতিদিন সব শ্রেণিতে ক্লাস হচ্ছে না।
শুধু চলতি বছরের ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য শ্রেণির মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, নবম শ্রেণিতে দুই দিন এবং অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এক দিন ক্লাসে আসতে বলা হয়েছে।