বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাম্প্রদায়িক সংঘাত: গ্রেপ্তার ভয়ে ঘরছাড়া ৯ গ্রামের পুরুষ

  •    
  • ৩ নভেম্বর, ২০২১ ২৩:৫৪

দিনে নারী এবং বৃদ্ধরা বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হলেও রাতে এসব গ্রাম যেন হয়ে পড়ে মৃত্যুপুরী। জনজীবনেও পড়েছে নানা প্রভাব। শ্রমিক না থাকায় ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। ব্যবসায়ও নেমেছে ধস।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মামলার পর গ্রেপ্তার-আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে দুই ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম। এমনকি এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও গ্রাম ছেড়েছে।

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ না থাকায় বাজার করা থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সব কাজই করছেন নারী ও বৃদ্ধরা। উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে পরিবারগুলোর। এসব গ্রামের জনজীবন হয়ে পড়েছে অনেকটাই স্থবির।

অভিযোগ উঠেছে, মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে এই সুযোগে একটি পক্ষ অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার ঘটনার পর উলিপুর উপজেলায় তিন ইউনিয়নের পাঁচটি মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়। ওই সময় প্রতিমা ভাঙচুর, মণ্ডপে অগ্নিসংযোগ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

ওই ঘটনায় উলিপুর থানায় মণ্ডপে ভাঙচুর এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে পুলিশের পাঁচ মামলায় ৭৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং সাত শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।

তারা আরও জানান, মামলার পর থেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফড়া ও কালুডাঙ্গা গ্রামের কাঠালীপাড়া, হাজীপাড়া, খারিজাপাড়া, মৌলভীপাড়া, পূর্ব পাড়া, কালুডাঙ্গা পাড়া; থেতরাই ইউনিয়নের রামপ্রসাদ, হোকডাঙ্গা, কিশোরপুর, বকশিপাড়া ও তেলিপাড়া এবং থেতরাই বাজার এলাকার ফকিরপাড়া, সাতদরগাহ্, দালালিপাড়া, মতুল্ল্যাটারী ও কানিপাড়া পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

দিনে নারী এবং বৃদ্ধরা বাজার করাসহ বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হলেও রাতে এসব এলাকা যেন হয়ে পড়ে মৃত্যুপুরী।

পুরো এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় নানা প্রভাব পড়েছে এসব গ্রামে। শ্রমিক না থাকায় ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে ফসল। ব্যবসায়ও নেমেছে ধস। এমনকি মসজিদে আজান ও নামাজও হচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের অভিযানের কারণে প্রকৃত অপরাধীদের পাশাপাশি নিরীহ মানুষগুলোও আত্মগোপনে রয়েছেন। এমনকি এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। করোনার সময়ে দীর্ঘদিন পড়ালেখার বাইরে থাকা এসব শিক্ষার্থী এখন পরীক্ষার আগে যেখানে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে, তাদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

নুরানী পাড়ার ফরিদা বেগম বলেন, ‘আমার দুই ছেলে-মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে, কিন্তু হঠাৎ এক দিন বাসায় পুলিশ আসায় ছেলে আমার পালিয়েছে। আর তার কোনো খোঁজখবর নেই। কোথায় আছে, কী খাচ্ছে, কিছুই জানা নেই আমাদের।

‘দুই সন্তানের পরীক্ষার প্রিপারেশন ভালো ছিল। কিন্তু কোথা থেকে কী ঘটে গেল, এখন সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি আমরা।’

মতুল্ল্যাটারী গ্রামের শিক্ষার্থী সজিব হাসান বলেন, ‘দুর্গাপূজায় মণ্ডপ ভাঙচুরের ঘটনার পর থেকে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আমার মতো অনেক ছেলেও পালিয়েছে। তখন থেকে মহল্লার মসজিদে আজান ও নামাজও হয় না। মসজিদ তালা মারা রয়েছে।’

রামপ্রসাদ পাড়ার কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, ‘হামার এলাকাত সবজি ভালো হয়। এই যে শীতকালিন সবজি তুলমো তার কামলা পাইছি না। এলাকার অবস্থা ভালো না। এলাকাত কামলা তো দূরে থাক, ফকির-মিসকিনও আসে না।’

ফকিরপাড়ার নবীজন বেগম বলেন, ‘ভাত নাই, পানি নাই, কী খাই? মানষের বাড়িত কাম পাওয়া যায় না? ইয়ার থাকি হামার মরণ ভালো।’

সাতদরগা রাস্তার পাশের মুদি দোকানদার জাহাঙ্গীর আলম জানান, শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় মুদি দোকান করে সংসার চালান। হামলার পর দুই দিন দোকান খুলে এক দিন ১০ টাকা আরেক দিন ২০ টাকার চা বিক্রি করতে পেরেছেন।

ফকিরপাড়ার সাথী আক্তার জানান, পুরুষরা না থাকায় শিশুসন্তানদের খাবারের জন্য নারীরাই বাজার করছেন। গাড়ির হর্নেও এখন বাচ্চারা কেঁদে ওঠে। রাতে স্বাভাবিকভাবে কেউ ঘুমাতে পারেন না।

অটোরিকশাচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আগে ৮০০ থেকে হাজার পর্যন্ত আয় হতো। মামলার পর থেকে এলাকায় পুরুষ না থাকায় এখন দুই-আড়াই শ টাকাও কামাই হয় না। অটো কিনছি লোন করে, সেই কিস্তির টাকাও দিতে পারছি না?’

উলিপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টু জানান, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে একটি চক্র গোপনে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের থামাতে হবে।

তবে এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা পুলিশ প্রশাসনের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিভাগের আরো খবর