বিএনপি নির্বাচনেও যাবে না, সংলাপেও না, দলটির নেতাদের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘আপনাদেরকে কে ডেকেছে সংলাপে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশে জাদুঘরে। নির্বাচন হবে সংবিধান মেনে।’
বুধবার জেল হত্যা দিবস স্মরণে আওয়ামী লীগের আলোচনায় সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মুনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়।
জেল হত্যার পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গেও কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগের অধীনেই। তবে এবার তারা নির্দলীয় সরকারের দাবি তুলে ধরছে। বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ভোটে আসবে না তারা।
বিএনপির ভোটে না আসার হুমকির বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেবেন কি নেবেন না সেটা আপনাদের ব্যাপার। নির্বাচন সময় মতো সংবিধান অনুসারে হবে। সময় আর স্রোত যেমন কারও জন্য অপেক্ষা করে না নির্বাচনও কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। বিএনপি নির্বাচনে এলো কি এলো না সেটার ওপর নির্বাচন নির্ভর করে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন বড় বড় গলায় কথা বলছেন। যে নির্বাচনে অংশ নেব না, সংলাপেও যাব না। আপনাদেরকে কে ডেকেছে সংলাপে? শেখ হাসিনা এত উদার, গতবার সংলাপ ডেকেছিল। সেটায় আপনারা কী জবাবটা দিয়েছেন? সেই সংলাপের পর আপনাদের ভূমিকা কী ছিল? আপনাদেরকে কেউ সংলাপে ডাকছে না। নিজেরাই আগ বাড়িয়ে সংলাপের কথা বলেছেন।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উচ্চ আদালতের আদেশে ‘জাদুঘরে’ চলে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাদুঘর থেকে তা আর ফিরবে না। নির্বাচন হবে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো সংবিধান মেনে।’
দুর্গাপূজার সময় হিন্দুদের ওপর দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে হামলা হয়েছে, তার পেছনে বিএনপির হাত আছে বলেও অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘আজকে সাম্প্রদায়িক শক্তি যে তাণ্ডব চালাচ্ছে, কিছুদিন আগেও চালিয়েছে; তার বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির ছাতাতলেই আজকে এরা আস্ফালন করছে।
‘আজকে বাংলাদেশে আমাদের প্রথম শত্রু হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের যে চারা জিয়াউর রহমান বপন করেছিলেন তা আজকে ডাল-পালা বিস্তার করে ফেলেছে। এই বিষবৃক্ষকে উৎপাটন করতে হবে, ৩ নভেম্বর আমাদের সেটাই শপথ।’
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার মতো ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যার নেপথ্যেও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা আছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘৩ নভেম্বরের হত্যা সংগঠিত করে ১৫ আগস্টের খুনিদের বিদেশে পাঠিয়েছিল তৎকালীন সেনাপতি জিয়াউর রহমান। বিদেশি দূতাবাসে তাদের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন তিনি। তাহলে কি তিনি এমন হত্যাকাণ্ডের জড়িত নন?
‘বঙ্গবন্ধুর হত্যার খুনিদের বাঁচাতে মোস্তাক যে অর্ডিন্যান্স করেছিলেন, তাকে আমাদের পবিত্র সংবিধানে বৈধতা দিয়েছিল তারই সেনাপতি জিয়াউর রহমান। ইতিহাসের এমন নির্মম সত্যকে কি মির্জা ফখরুল অস্বীকার করতে পারবেন?’
ইতিহাসের অনেক অজানা সত্য ১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে পাওয়া যাবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘সেই সত্য উম্মোচন করার দিন এসেছে। নতুন প্রজন্ম সেই ইতিহাস জানতে চায়।’
এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।