ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটে প্রথম হয়েছেন মেফতাহুল আলম সিয়াম।
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের এ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় শুধু একটি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিয়েছেন।
গত ১ অক্টোবর এই ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিয়াম গণিত অংশের একটি এমসিকিউতে ভুল করেন।
১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় এ শিক্ষার্থী পেয়েছেন ৯৭ দশমিক ৫। এসএসসি-এইচএসসিতে জিপিএ ফাইভ থাকায় সেখানেও ২০ এর মধ্যে সম্পূর্ণ নম্বরই পেয়েছেন। ফলে ১২০ নম্বরের মধ্যে এই শিক্ষার্থীর সর্বমোট নম্বর ১১৭ দশমিক ৫।
সিয়ামের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীব বিজ্ঞান এবং গণিত অংশে পরীক্ষা দিয়েছেন। প্রতিটি বিষয়ে লিখিত এবং এমসিকিউ দুইটা অংশ রয়েছে।
প্রতিটি বিষয়ে ১৫টি এমসিকিউ রয়েছে। প্রশ্নপ্রতি নম্বর ১। সে হিসাবে চারটি বিষয়ের এমসিকিউতে মোট ৬০ নম্বর আর লিখিতে ১০ করে মোট ৪০ নম্বর। দুই অংশ মিলে সর্বমোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা।
পদার্থ বিজ্ঞানের এমসিকিউ অংশে থাকা ১৫টি প্রশ্নেরই সিয়াম সঠিক উত্তর দিয়েছেন। আর লিখিত অংশে ১০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৯ দশমিক ২৫।
রসায়নের এমসিকিউ অংশে থাকা ১৫টি প্রশ্নেরও সিয়াম সঠিক উত্তর দিয়েছেন। আর লিখিত অংশে ১০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৯ দশমিক ৭৫।
গণিতের এমসিকিউতে তিনি ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। একটির উত্তর ভুল হওয়ায় এই অংশে তিনি পেয়েছেন ১৩.৭৫ নম্বর। কিন্তু লিখিত অংশে তিনি সম্পূর্ণ ১০ নম্বরই পেয়েছেন।
সিয়াম সবচেয়ে ভালো করেছেন জীববিজ্ঞান অংশে। এই অংশের লিখিত এবং এমসিকিউ ভাগে তিনি সম্পূর্ণ নম্বরই পেয়েছেন। এমসিকিউতে ১৫ এবং লিখিতে ১০।
সিয়ামের এত নম্বরে আশ্চর্য হয়েছেন ‘ক’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মিহির লাল সাহা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ছেলেটি লিখিত বা এমসিকিউর একটি অংশে ভালো করেছে, তা কিন্তু নয়; ছেলেটি লিখিত এবং এমসিকিউ দুই অংশেই ভালো করেছে। এটির মাধ্যমে বোঝা যায় ছেলেটি ভালো পরীক্ষা দিয়েছে এবং সে আসলেই ভালো ছাত্র।’
মেফতাহুল আলম সিয়াম শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটেই প্রথম হননি, তিনি গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রথম হন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় সিয়ামের অবস্থান ৫৯তম।
কলেজে থাকাকালে সিয়াম বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ কেমিস্ট্রি অলম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে কলেজ পর্যায়ে অষ্টম এবং বিজ্ঞান একাডেমির স্থানীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে তিনি প্রথম হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক’ ইউনিটে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৮১৫টি। এসব আসনের বিপরীতে আবেদন করেন ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৭ শিক্ষার্থী, তবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন ৯৪ হাজার ৫০৫ জন।
এমসিকিউ এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ১০ হাজার ১৬৫ জন, যা অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর ১০ দশমিক ৭৬ ভাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান বুধবার দুপুরে ফল ঘোষণা করেন।
এবার ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় ৯৪ হাজার ৫০৯ জন অংশ নিলেও এর মধ্যে ৯১২ জনের উত্তরপত্র বাতিল করা হয়েছে।
কী কী কারণে বাতিল করা হতে পারে জানতে চাইলে ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক মিহির লাল বলেন, ‘উত্তরপত্র বাতিলের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। একটি হলো পরীক্ষায় ছয়টি বিষয়ের প্রশ্ন দেয়া থাকে। এর মধ্যে শুধু চারটি বিষয়েই শিক্ষার্থীরা উত্তর করতে পারবে।
‘কেউ যদি চারটি বিষয়ের জায়গায় পাঁচটি বা সব বিষয়ের উত্তর করে তাহলে তার উত্তরপত্র বাতিল করা হয়। এটিই মূল কারণ। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষার অন্যান্য নির্দেশনা ভঙ্গ করলেও উত্তরপত্র বাতিল করা হয়।’