কুষ্টিয়ার হাসপাতালে একসঙ্গে জন্ম নেয়া পাঁচ শিশুর মধ্যে মারা গেছে আরেক মেয়েশিশু। অন্য দুই শিশুর অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে বাচ্চাটির মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশরাফুল আলম।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে ওই পাঁচ শিশুর মধ্যে ছেলেশিশুটি ও দুপুর আড়াইটার দিকে এক মেয়ে শিশু মারা যায়। এ নিয়ে তিন শিশুর মৃত্যু হলো।
আরএমও আশরাফুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে ওজনের এসব বাচ্চা হয়েছে তাতে কোনটিই সারভাইভ করতে পারবে না। বাকিটা ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ওই পাঁচ শিশুর বাবা সোহেল রানা জানান, হাসপাতাল থেকে ছবি তুলে রেখে তিন শিশুর মরদেহ তার কাছে দেয়া হয়েছে। তিনিও শিশুদের মরদেহ গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন দাফনের জন্য।
বাকি দুই শিশুর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন সোহেল রানা।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বাচ্চাগুলো কম ওজনের। এ কারণে তাদের সার্ভাইভ করা কঠিন। তাদের রাখার জন্য হাসপাতলে সে রকমের আইসিইউ সাপোর্ট নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা নিয়ে যাওয়া দরকার। বাচ্চাটির বাবা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় তারা এখানে রেখেই চিকিৎসা দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু এত কম ওজনের বাচ্চাকে আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়া বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে।’
তিনি আরও বলেন,‘ধারণা করছি বাচ্চাদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে তাদের মায়ের পেটে চাপ বেশি হয়। এ কারণেই সময়ের আগেই তার প্রসব বেদনা ওঠে। তবে এ বিষয়ে আরও জানার জন্য গবেষণা প্রয়োজন।’
জীবিত শিশুদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শিশুগুলোকে এখনো স্ক্যানো ওয়ার্ডে আলোর তাপে রাখা হয়েছে। তাদের অক্সিজেন দেয়া আছে ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
অন্যদিকে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ওই শিশুদের বাবা সোহেল রানার হাতে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে জন্মে নেয় পাঁচ শিশু।
চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার ছাড়া গর্ভধারণের পাঁচ মাসের মাথায় জন্ম হওয়ায় শিশুদের ওজন কম হয়েছে। মা সুস্থ আছেন।
ডাক্তার নাজিম এই বাচ্চাগুলোকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসায় সহযোগিতা করার জন্য সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
একই আহ্বান জানিয়েছেন শিশুটির বাবা সোহেল রানা। তিনি বলেন, ‘আমার সামান্য চায়ের দোকান আছে, শ্রমিকের কাজ করি। আল্লাহ একসঙ্গে পাঁচটি বাচ্চা দিয়েছে, তিনজন তো মারাই গেল। অন্য দুইজনকে বাঁচিয়ে রাখতে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার মতো টাকা আমার নেই।’