১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকুরিচ্যুত করার অপরাধে সাবেক সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেছেন স্বজনরা।
এ ছাড়া সে সময় যাদের বিনা বিচারে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল তাদের নির্দোষ ঘোষণাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার জেলহত্যা দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ১৯৭৭ সালে অভ্যুত্থানের অভিযোগ তুলে যাদের নির্যাতন, হত্যা ও চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিল সেসব পরিবারের স্বজন ও ভুক্তভোগীরা এ সময় মন্ত্রীর কাছে এসব দাবি জানান।
‘১৯৭৭ সালে খুনি জিয়ার গুম-ষড়যন্ত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গ’ ব্যানারে এ দাবি জানান ভুক্তভোগীদের আত্মীয়-স্বজনরা।
তাদের দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান সেনা বিদ্রোহের নামে শ শ লোককে যে হত্যা করেছে সেটিও একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ওই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এখনও আহাজারি করছে। তারা জানতে চায় কেন তাদের বাবা-ভাই-স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে, কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, লাশ কোথায় আছে।’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি রিট আবেদন রয়েছে হাইকোর্টে। আমরা রিট আবেদনের রায়ের অপেক্ষা করছি। আমরা চাই দোষীদের বিচার হোক।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সামরিক আদালতে করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় হয়েছে এবং তাদের ফাঁসি হয়েছে। বিডিআর কাণ্ডের বিচার হয়েছে এবং আপিল করায় তা এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
‘কিন্তু ১৯৭৭ সালের বিদ্রোহের ঘটনায় যারা মারা গিয়েছেন এ জায়গাটা এখনও কোনো কিছু হয়নি। কোথায় তাদের দাফন করা হয়েছে তা এখনো কেউ জানে না। হত্যার পর তাদের মরদেহ পরিবারের হাতে দেয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যরা আদালতে রিট করেছেন। আমরা মনে করি, আদালত একটি সুষ্ঠু দিক নির্দেশনা দেবেন।’
সাত দফা দাবি
১. ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য যারা জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যূত হয়েছেন তাদের নির্দোষ ঘোষণা করা।
২. ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে স্ব-স্ব পদে সর্বোচ্চ র্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ সরকারি সসব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।
৩. যে সব বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনা ও বিমানবাহিনী সদস্যদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি হয়েছেন তাদেরকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করা ও কবর চিহ্নিত করে নামসহ স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা।
৪. নিহত সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরি দেয়া।
৫. নিহতদের তালিকা প্রকাশ করা।
৬. ১৯৭১ সালে যে সব সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন, কিন্তু পাকিস্তানি বন্দি শিবিরে আটক করে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করেছে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা।
৭. জিয়ার মরণোত্তর বিচার।