মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় চার নেতার অবদান নতুন প্রজন্মের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাদের সন্তানেরা। তারা বলছেন, জাতীয় চার নেতাকে বাদ দিয়ে সোনার বাংলা গড়া যাবে না।
জেল হত্যা দিবসে পুরান ঢাকায় পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বুধবার বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে এসব কথা বলেন তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর সন্তানেরা।
তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘আমরা শুধু শোক প্রকাশ করতে চাই না, কাঁদব আর আসব আর সেই দিনকে স্মরণ করব, তা নয়। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি যে মানুষদের হত্যা করলে দেশের চেহারা বদলে যায়, রাষ্ট্রের চিন্তাধারা বদলে যায়।
‘যথাযথ মর্যাদায় সম্মানের সঙ্গে নাগরিকদের সামনে সে মানুষদেরকে জানানো উচিত অনুপ্রেরণার জন্য। তাদেরকে আড়ালে রেখে কোনো দিনও আমরা সোনার বাংলা গড়তে পারব না।’
জাতীয় চার নেতাকে হত্যার বিচারের জন্য একটি স্বাধীন কমিশনেরও দাবি জানিয়েছেন সিমিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিচার আসলে সম্পন্ন হওয়া বলতে আপনারা যেটা বলছেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, জেল হত্যাকারীরা প্রায় একই মানুষ। আমি সকল মানুষের, সকল সচেতন নাগরিকের পক্ষ থেকে বিশ্বের সকল দেশে যেমন একটা বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা থাকে, পাশাপাশি একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়।
‘খালি গুলি করল, চলে গেল সেটা কিন্তু না। এর পেছনের যারা কারিগর, কুশীলব তাদেরকে জানার জন্য…আমরা হয়তো অনেককেই পাব না, অনেকেই মারা গেছেন, দেশের বাইরে আছেন। এরপরও যেন একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়।’
উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেশী ভারতের ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর বিচারের প্রসঙ্গ টানলেন তাজউদ্দীনকন্যা। বলেন, ‘আমরা সুদূর অতীতে না, পাশের দেশের দিকে যদি তাকাই, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার পর সে রকম কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একইভাবে রাজীব গান্ধী হত্যার পরেও তাই করা হয়েছে, ১৯৬৩ সালে কেনেডিকে আমেরিকায় হত্যা করা হয়। সে সময়ও আলাদা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কারণ আদালত কমিশন ছাড়া কারা ঘটনার পেছনে ছিল সেটা জানা যাবে না।’
মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে জাতীয় চার নেতার অবদান তুলে ধরে তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল, এই দুর্যোগময় মুহূর্তে আমাদের জাতীয় চার নেতা দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন।
‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যার ধারাবাহিকতায় নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।’
সোহেল তাজ বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে স্বাভাবিকভাবে আমরা চাই এটার বিচার হোক এবং খুনিদের শাস্তি হোক। আমরা এটাও চাই, যে সোনার বাংলার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, আমি মনে করি, আমরা পরিবারবর্গ মনে করি এনাদের জীবনীগুলো যদি আমরা জাতীয়ভাবে মানুষের সামনে, নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে পারতাম।
‘শুধু এই ৩ নভেম্বর নয়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বইপুস্তকে যদি তাদের জীবনীগুলো আমরা সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারতাম তাহলে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হতো। ভবিষ্যতে একটি সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আমরা নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে পারব।’
সরকারের সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৩ নভেম্বর শোকাহত দিনে এটাই আমাদের চাওয়া, আমাদের তো আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমরা চাই, একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ, সুন্দর বাংলাদেশ; এটাই আমাদের চাওয়া।’
ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর তৃতীয় পুত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘৩ নভেম্বর জেলখানায় যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তার ৪০ বছর হয়ে গেল। তদন্ত কমিশনসহ বিভিন্ন দাবি উঠছে, কিন্তু একটা তদন্ত কমিশন সে সময় গঠিত হয়েছিল, সেটার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কেউ জানতে পারেনি এখনও। তৎকালীন অবৈধ প্রেসিডেন্ট মোশতাকের নির্দেশে জেলখানায় ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।’