বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লঞ্চঘাটে খেয়ার জবরদস্তি টোল

  •    
  • ৩ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:৪০

শরীয়তপুরে খেয়াঘাটের নামে লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে টোলের নামে চাঁদাবাজি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। লঞ্চের পন্টুনে উঠতে খেয়াঘাটের নামে ১০ টাকা টোল, এরপর বিআইডব্লিউটিএ-এর লঞ্চ ভাড়ার সঙ্গে নির্ধারিত টোল ৫ টাকা।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লঞ্চঘাটের যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো টোল আদায় করা যাবে না। অথচ শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝি-ছাত্তার মাদবর লঞ্চঘাটে একজন যাত্রীকে টোল দিতে হচ্ছে দুইবার।

খেয়াঘাটের নামে লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে টোলের নামে চাঁদাবাজি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। লঞ্চের পন্টুনে উঠতে খেয়াঘাটের নামে ১০ টাকা টোল, এরপর বিআইডব্লিউটিএ-এর লঞ্চ ভাড়ার সঙ্গে নির্ধারিত টোল ৫ টাকা।

লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটে স্বার্থান্বেষী মহলের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ নৌপরিবহন মন্ত্রীর সভাপতিত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার মঙ্গলমাঝি-ছাত্তার মাদবর লঞ্চঘাট অর্থাৎ পূর্ব নাওডোবা-মাওয়া আন্তজেলা খেয়াঘাটের ইজারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ঠিক করা হয়, লঞ্চের টিকিটের সঙ্গে ঘাটের টোল বাবদ যাত্রী প্রতি ২ টাকা হারে আদায় করা হবে। এ রাজস্ব দৈনিক ভিত্তিতে লঞ্চমালিক সমিতি বিআইডব্লিউটিএকে পরিশোধ করবে।

সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, আদায়কৃত অর্থের বাৎসরিক আয়ের ৩০ শতাংশ জাজিরা উপজেলা পরিষদকে দেয়া হবে। এই ব্যবস্থা ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়।

অথচ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, এ খেয়াঘাট ভূমি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবছর ইজারা দেয়া হয়। ২০১৫ সালে ঘাটটির ইজারামূল্য ছিল ৮৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ভ্যাটসহ সরকারি মূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ফলে ওই বছর সরকারি মূল্যে ইজারা দরপত্র দাখিলে কেউ আগ্রহ দেখায়নি।

পরের চার বছর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে খাস আদায় করা হয়। কিন্তু এতে ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হয়। পরে চলতি বছর খাস আদায় স্থগিত করে আবারও ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩৫ লাখ টাকা। ইজারা পান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনির খান। তার সঙ্গে স্থানীয় যারা অংশীদার তারা হলেন আলতাফ খান, রাজ্জাক মাঝি, নেছার মাদবর, তুহিন ফরাজি ও শামীম মোড়ল।

টোলের অর্থ নেয়া হচ্ছে লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে। খেয়াঘাটের ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী, যাত্রীপ্রতি পাঁচ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ।

এ অনিয়ম বন্ধে খেয়াঘাটকে ইজারাবহির্ভূত রাখার জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই চিঠির কোনো উত্তর পায়নি শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন।

সরেজমিন ওই ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পন্টুনে ওঠার আগেই বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। সেখানে যাত্রীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানোর জন্য আদায়কারী চক্রের একজন যাত্রীদের সাথে উচ্চ স্বরে চেঁচামেচি করছেন। এরপর যাত্রীপ্রতি ১০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। যাদের মালামাল আছে তাদের পাশে নিয়ে চলছে দর-কষাকষি। চাহিদামতো টাকা না দিলে যাত্রীদের অপদস্ত করা হচ্ছে।

এই কর্মীরা গণমাধ্যমের উপস্থিতি টের পেয়ে পাঁচ টাকা করে টোল আদায় শুরু করেন। সঙ্গে রসিদও দিতে থাকেন তারা। বাধ্য হয়েই সব মেনে নিয়ে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা। সেখানেও আরেক দফা টোলের টাকা দিতে হচ্ছে লঞ্চ ভাড়ার সঙ্গে।

শরীয়তপুর থেকে ঢাকা যাচ্ছেন মো. হামিদ। তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘১০ টাকা কইরা নিতাছে। কোনো রসিদ দেয় নাই। অন্যান্য ঘাটে ঠিকঠাক চলতাছে, কিন্তু ছোট্ট ইট্টু ঘাট, তারপরেও এরা টোল নিতাছে। এই টাকা এরা কী করে? কোন সরকারে খায়? মাওয়া ঘাটে তুলতাছে না, কাওরাকান্দি ঘাটে তুলতাছে না, তারপরে সামনে আর একটা ঘাট আছে, হেইহানেও তুলতাছে না। এইহানে ক্যান তুলে? কেউ দেহার নাই?’

লঞ্চে উঠে কথা হয় সুমন নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেই কয়বারই যাই, সেই কয়বারই টোল দিতে অয়। ১০ টাকা কইরা টোল দেয়া গায়ে বাইজা যায়, আমাগো কষ্ট অয়। কিন্তু এখন আমরা পরিস্থিতির শিকার। তাদের সাথে প্রতিবাদ করতে গেলে তারা টরচারিং করতে আসে বা খারাপ কথা বলে। এ কারণে আমরা বাধ্য হই দিতে।’

শরীয়তপুর নিবাসী কুয়েত প্রবাসী মো. মাহফুজুর রহমান বাড়ি থেকে আবার ঢাকায় যাচ্ছেন। লঞ্চের মধ্যে সহযাত্রীদের সঙ্গে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ঘাটে জুলুম করে। জোরজবরদস্তি করে। মানুষ মনে করে না। কিছু বললে যাইতে দেয় না।’

কথা হয় তার সঙ্গে। মাহফুজুর বলেন, ‘ভাই ধরেন আপনি একটা টিভি কিন্না আনছেন বা একটা শখের জিনিস কিন্না আনছেন। এখানে এরা দুই শ টাকা তিন শ টাকা চাইয়া বইয়া থাকে। এইডা আমনে না দিয়া যাইতে পারবেন না। আর যদি বিদেশ থিক্কা লাগেজ-ঠাগেজ লইয়া যাওন যায়, তয় তো রক্ষা নাই, ১০ হাজার টাকা চাইয়া বইয়া থাকব। দুই হাজার তিন হাজার টাকা দিলে ফিক্কা হালাইয়া দিব।’

আদায়কারী ইজারাদারের প্রতিনিধি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এইডা খেয়াঘাটের টাকা। লঞ্চেরটা আলাদা আর ঘাটেরটা আলাদা।’

লঞ্চঘাটে বসে খেয়াঘাটের টোল আদায় এটা তো অবৈধ, তবে কেন তুলছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এইডা জানে প্রশাসন। আমরা ইজারা আনছি। টোল উডাই এতটুকুই জানি। বেশি কিছু জানতে অইলে প্রশাসনের কাছে জানেন। তারা যদি বন্দ কইরা দিতে বলে, বন্দ কইরা দিমু। এখানে কে কয় টাকা কইরা নেয়, সব তো আমি কইতে পারুম না। আমি পাঁচ টাকাই নেই।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝি-ছাত্তার মাদবর লঞ্চঘাটের ঘাট ইনচার্জ ট্রাফিক সুপারভাইজার (টিএস) আব্দুলাহ ইনয়াম বলেন, ‘এই ঘাটের পন্টুন, সিঁড়ি ও কাঠের সেতু সব কিছুই বিআইডব্লিউটিএ-এর মালিকানাধীন। আর এটা ব্যবহারের জন্য লঞ্চ ভাড়ার সঙ্গে যাত্রীপ্রতি পাঁচ টাকা টোল আদায় করা হয়। এটি কোনো খেয়াঘাট নয়। এখান দিয়ে শুধু লঞ্চযাত্রীরাই যাতায়াত করে।’

তবে কেন লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে টোল আদায় হচ্ছে, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘টোল আদায়ের কাজটি হচ্ছে লঞ্চঘাটের সীমানার বাইরে। আমাদের করণীয় কিছু নেই। এটা স্থানীয় প্রশাসনের কাজ। তবে লঞ্চযাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় নিয়মবহির্ভূত।’

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমাধানে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযান চালাই। ইজারাদারকে নীতিমালা মেনে টোল আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবার নির্দেশ অমান্য করলে এ ঘাটের ইজারা বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর