ঠাকুরগাঁওয়ে বাসের ধাক্কায় ১৩ বছর বয়সী স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবহন মালিকের দেয়া এক লাখ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে পরিবার।
পরিবারটিকে ‘ক্ষতিপূরণ’ হিসেবে টাকা দিতে না পারার পর স্থানীয় মসজিদ কমিটিকে বুঝিয়ে দেয় পরিবহন মালিক পক্ষ।
নিহত স্কুল ছাত্রের নাম সিয়াম ইসলাম। গত ২৫ অক্টোবরে জেলার দুরামারিতে রাস্তা পার হওয়ার সময় হানিফ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় আহত হয় সে। স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করে।
সিয়ামের সহপাঠীরা বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে। কোনো অভিযোগ না করার শর্তে সিয়ামের পরিবারকে এক লাখ টাকা দিতে রাজি হয় হানিফ পরিবহন।
সেই প্রস্তাব নিয়ে সিয়ামের পরিবারের কাছে টাকা নিয়ে উপস্থিত হলে মামলা না করার বিষয়ে লিখিত দেন নিহত কিশোরের বাবা ফিরোজ হাসান মিয়া। তবে তিনি টাকা নিতে রাজি হননি।
ফিরোজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়। কারও উপর কোনো অভিযোগ রেখে কী হবে? অভাবের সংসার হলেও কারো কাছে কখনো সাহায্য নেইনি। আমাদের একমাত্র সন্তানের বিনিময় এক কোটি টাকাতেও কম হয়ে যাবে। তাহলে অনুদানের এই টাকা আমি কেন নেব।’
রাস্তায় গাড়ির গতি কম রেখে সাবধানে গাড়ি চালানোর অনুরোধ করেছেন সিয়ামের মা সুরাইয়া ইউনুসা।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই না আর কোনো মায়ের কোল খালি হোক। আর কোনো মা যেন আমার মতো না কাঁদে।’
সিয়ামের পরিবারকে টাকা দেয়ার চেষ্টায় মধ্যস্ততা করা মোটর শ্রমিক নেতা শাহাদত হোসেন বলেন, ‘আমরা বেশ কয়বার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অনুদানের এক লক্ষ টাকা দেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কিছুতেই সেই টাকা নিতে রাজি হয়নি। অবশেষ টাকা সিয়ামের নামে স্থানীয় গবিন্দ নগর জামে মসজিদের উন্নায়নে দান করে আসি।’
সিয়ামের পরিবার টাকা না নেয়ার পর তা দেয়া হয় গোবিন্দ নগর জামে মসজিদে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘মসজিদের উন্নয়নে টাকা দেয়ার বিষয়টি জেনেছি। টাকাটি মসজিদ কমিটির সদস্য আরফান আলীর কাছে জমা রয়েছে। কমিটির সকল সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করার পর এ বিষয়ে করণীয় ঘোষণা দেয়া হবে।’
আরফান আলী নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘দুরামারি নামক ছোট্ট একটি বাজারে ফ্লাক্সি লোডের দোকান আছে সিয়ামের বাবার। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ছেলে নিয়ে চার সদস্যের সংসার তার। টাকাটা আবার তাকে দেয়ার চেষ্টা করব আমরা।’