রংপুরের হারাগাছে পুলিশি নির্যাতনে তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগে থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ জনকে।
হারাগাছ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল খালেক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলাটি করেন।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন।
তিনি জানান, মাদক রাখার অভিযোগে থানার আরেক এসআই রিয়াজুল ইসলাম আরেকটি মামলা করেছেন। তাতে আসামি করা হয়েছে নিহত তাজুল ইসলামকে।
আবু মারুফ আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর এই দুটি মামলা হারাগাছ থানায় রেকর্ড করা হয়। হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় কারও নাম উল্লেখ নেই। কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে তাজুল ইসলামের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তাজুলের ভাই লোটাস মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ ডাকাইছে, আমরা মেডিক্যালোত গেছি। ওট থাকি আসি থানাত যায়া লাশ নিয়ে মাটি দিচি।’
সোমবার সন্ধ্যার দিকে হারাগাছের বাছিবানিয়া এলাকায় পুলিশ তাজুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। পরে থানা ঘেরাও করেন তারা। ওই সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তাজুল ইসলামকে গাঁজাসহ আটকের দাবি করে পুলিশ। ওই সময় তিনি জ্ঞান হারান। পুলিশ তখন তাকে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাজুলের।
হারাগাছ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম ফিরোজ জানান, তাজুলের নামে কাউনিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা ছিল। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও ছিল। কয়েক মাস আগেও তাকে মাদকসহ আটক করা হয়।
তাজুলের মৃত্যুর প্রতিবাদে প্রথমে রংপুর-হারাগাছ সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। পরে তারা হারাগাছ থানা ঘেরাও করেন। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুলিশ জানায়, স্থানীয়রা থানায় হামলা করে চত্বরে রাখা পাঁচটি মোটরসাইকেল ও দুটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করে। বিক্ষোভকারীরা রাত ৯টার দিকে রংপুর-হারাগাছ সড়কের হক বাজার এলাকায় অবস্থা নেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
মহানগর পুলিশের সহকারী উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘পুলিশি নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়নি। এটা প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানেন। পুলিশের কাছে খবর ছিল তাজুলের কাছে মাদক আছে। মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ তার কাছে গেলে তিনি দৌড় দেন। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। পরে তাজুলের কাছ থেকে তিন পোটলা হেরোইন পাওয়া যায়।
সোমবার রাত পৌনে তিনটার দিকে তাজুলের ছোট ভাই মোর্তুজা রহমান হারাগাছ থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন।