বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক বছরে একই ফ্ল্যাটে দুইবার বিস্ফোরণ

  •    
  • ২ নভেম্বর, ২০২১ ১৮:২০

২০২০ সালের ৮ নভেম্বর কাট্টলির বিশ্বাসপাড়া এলাকার মরিয়ম ভিলার এফ-টু ফ্ল্যাটে আগুন লাগে। ওই সময় দগ্ধ হয় নয়জন। পরে মারা যান তিনজন।

চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীর যে ভবনে গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, গত বছর ওই ভবনের একই ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণ হয়েছিল বলে জানিয়েছে ভবনের অন্য বাসিন্দারা।

তারা জানান, সে সময় বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই পরিবারের নয়জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তিনজনের।

কাট্টলির বিশ্বাসপাড়া এলাকার মরিয়ম ভিলা নামের ভবনটির একাধিক বাসিন্দা মঙ্গলবার দুপুরে নিউজবাংলাকে বিষয়টি জানান।

ভবনের নিচতলার বাসিন্দা নুরুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতবছর ৮ নভেম্বর ভবনের ছয়তলার এফ-টু ফ্ল্যাটে একইভাবে বিস্ফোরণ হয়েছিল। সে সময় ওই ফ্ল্যাটে দুই ফ্যামিলির নয়জন থাকত। বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগে, আগুনে সবাই দগ্ধ হয়েছিল। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে একজন ও ঢাকা মেডিক্যালে দুইজন মারা যায়।’

ভবনের নিচতলার আরেক বাসিন্দা মো. পারভেজ বলেন, ‘এ বছর কয়েকদিন আগেও ওই ফ্ল্যাটের সবাই গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিল। তারা বিল্ডিংয়ের ইনচার্জকে জানিয়েছিল। ইনচার্জ বলেছিলেন কিছু হবে না। আমরা নিচতলায় থেকেও গন্ধ পেয়েছিলাম। অথচ এখন কতোবড় একটা দুর্ঘটনা হল, ছয়জন মানুষ পুড়ে গেল। মালিকের কিছু হবে?’

গত সোমবার রাতের বিস্ফোরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি গলির মুখে ছিলাম। বিকট একটা শব্দ হয়। চারদিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেলাম না। কিন্তু উপরে তাকাতেই দেখি আমাদের ভবনের ছয় তলার বেলকনিতে এক নারীর গায়ে আগুন জ্বলছে। যেন কেউ কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীর মরিয়ম ভিলার এফ টু ফ্ল্যাটে সোমবার রাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে

‘তারপর দ্রুত বাসার সবাইকে বের করে নিই। উপরে যাওয়ার চেষ্টা করেও ভয়ে যেতে পারিনি। আশেপাশের লোকজন গিয়ে আগুন নিভিয়ে উদ্ধার করেছে তাদের।’

মঙ্গলবার মরিয়ম ভিলা নামের ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায় ভবনের অধিকাংশ ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ। সেসব ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা রাতের বিস্ফোরণের পর আতঙ্কিত হয়ে ভবন ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়দের বাসায়। ষষ্ঠ তলার বাকি দুটি ফ্ল্যাট ছিল খালি।

আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালের বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ নয়জন হলেন পিয়ারা বেগম, মিজানুর রহমান, সাইফুর রহমান, বিবি সুলতানা, বছরের শিশু মানহা, আট বছরের মাহেরা, সুমাইয়া, রিয়াদ ও সালমা জাহান।

তাদের মধ্যে ৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা চলাকালে পিয়ারা বেগম মারা যান। ১১ নভেম্বর ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে মারা যান পিয়ারা বেগমের ছেলে মিজানুর। একই হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে মারা যান সাইফুর রহমানও।

সে সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের এক জন, ফায়ার সার্ভিসের এক জন ও বিদ্যুৎ বিভাগের এক জন সদস্য নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। তাদের ঘটনা পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

ওসি আরও জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্যাসের চুলায় পানি ফুঁটাতে দিলে ফুটন্ত পানি পড়ে নিভে যায় চুলা। চুলার গ্যাস বন্ধ না করায় ঘরে গ্যাস জমতে থাকে। এক পর্যায়ে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটে।

তদন্ত প্রতিবেদনে ভবন মালিক মমতাজের কোনো দোষ না পাওয়ায় সে সময় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

স্থানীয়রা জানায়, গত বছরের নভেম্বরের ঘটনার পর ভয়ে ওই ভবনের ষষ্ঠ তলায় আর কেউ ওঠেনি। তিন মাস আগে জামাল শেখ নামে এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে এফ-২ ফ্ল্যাটে ওঠেন।

গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মরিয়ম ভিলার ওই ফ্ল্যাটের বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ছয়জন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন।

আকবর শাহ থানার পরিদর্শক এম সাকের আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বন্ধ ঘরে মশা মারার ব্যাট অন করার সময় গ্যাসের লাইনের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাসে আগুন লেগে যায়।’

দগ্ধরা হলেন সাজেদা বেগম শাহজাহান শেখ, ১৮ বছর বয়সী দিলরুবা বেগম, ১৭ বছর বয়সী স্বাধীন শেখ, ১৪ জীবন শেখ ও নয় বছর বয়সী মাহিয়া আক্তার।

ওসি জহিরুল ইসলাম জানান, ভবন মালিক মমতাজ মিয়া ও কেয়ার টেকার আবুল হোসেনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর