রাজধানীর গুলশানে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়ে আগামী ২১ নভেম্বর ঠিক করেছে আদালত।
মঙ্গলবার মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ছিল। কিন্তু এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি।
ঢাকার মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা পরে প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ ঠিক করে দেন।
গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (নারী-শিশু) সাইফুর রহমান বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
গত ৬ সেপ্টেম্বর মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, তার বাবা, মা ও স্ত্রীসহ ৮ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন।
আদালত গুলশান থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে নিয়ে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার অপর আসামিরা হলেন আনভীরের বাবা আহমদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা, স্ত্রী সাবরিনা, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মুনিয়ার বাড়িওয়ালা ইব্রাহিম আহমেদ রিপন, তার স্ত্রী শারমিন এবং আনভীরের ‘মেয়েবন্ধু’ সাইফা রহমান মিম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মুনিয়াকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর তাকে কলেজ হোস্টেল থেকে ২০১৯ সালের জুনে ৬৫ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। তিনি মুনিয়াকে সাত থেকে আট মাস ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি অপর আসামিরা জেনে গেলে আনভীরের বাবা, মা পিয়াসার মাধ্যমে মুনিয়াকে তাদের বাসায় ডেকে এনে ঢাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। অন্যথায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।
এ অবস্থায় আনভীর বিয়ের আশ্বাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুনিয়াকে কুমিল্লায় বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেন। মুনিয়ার সঙ্গে আনভীর মোবাইলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে বিয়ের আশ্বাস দিতেন।
অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, গত ১ মার্চ আবার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়াকে কুমিল্লা থেকে গুলশানে মাসিক এক লাখ ৩০ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন আনভীর। বাসায় একা রেখে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও বিয়ের প্রলোভনে তাকে ধর্ষণ করেন তিনি। এতে মুনিয়া অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ পর্যায়ে মুনিয়া আনভীরকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। এতে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও বিরোধ সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি অপর আসামিদের মধ্যে প্রকাশ পেলে তারা পারিবারিক সুনাম রক্ষায় মুনিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে আনভীর মুনিয়াকে কুমিল্লা চলে যেতে বলেন। না হলে তার (আনভীর) মা তাকে (মুনিয়া) মেরে ফেলবে বলেও জানান।
তখন মুনিয়া লাইভে এসে সবকিছু ফাঁস করে দেবেন বলে আনভীরকে জানান। তখন মুনিয়াকে আনভীর বলেন, ‘এত সময় তুই পাবি না। আমি তোকে দেখে নেব।’
নুসরাত জাহান অভিযোগে বলেন, মুনিয়া ঘটনাটি আঁচ করতে পেরে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা ছেড়ে যশোর পালিয়ে যেতে চায়। এ জন্য সে ২৬ এপ্রিল সকালে দুই দফা বাড়িওয়ালা এবং তার স্ত্রীর কাছে গাড়ি চায়। তারা গাড়ি না দিয়ে উল্টো বিষয়টি অপর আসামিদের কাছে ফাঁস করে দেয়। তখনই সব আসামি পরস্পর যোগসাজশে মুনিয়াকে বাসায় আটকে রেখে হত্যার ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করে এবং কিলিং মিশন দিয়ে মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে।