রংপুরের হারাগাছে পুলিশি নির্যাতনে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ করা হলেও এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
মোর্তুজা রহমান আবু সোমবার রাত পৌনে তিনটার দিকে তার বড় ভাই তাজুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় হারাগাছ থানায় এ মামলা করেন।
এ ছাড়া সরকারি কাজে বাধা ও ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
হারাগাছের বাছিবানিয়া এলাকায় সোমবার সন্ধ্যার দিকে এক ব্যক্তিকে পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ তোলেন স্থানীয় লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে তাজুল ইসলামকে গাঁজাসহ আটকের দাবি করে পুলিশ। এ সময় তিনি জ্ঞান হারান। পুলিশ তখন তাকে মারধর করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাজুলের।
রাতেই তাজুলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সোমবার রাতে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়
তাজুলের মৃত্যুর প্রতিবাদে প্রথমে রংপুর-হারাগাছ সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। পরে তারা হারাগাছ থানা ঘেরাও করেন। পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুলিশ জানায়, স্থানীয়রা থানায় হামলা করে চত্বরে রাখা পাঁচটি মোটরসাইকেল ও দুটি পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা রাত ৯টার দিকে রংপুর-হারাগাছ সড়কের হক বাজার এলাকায় অবস্থা নেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
এলাকাজুড়ে রাতে এত উত্তেজনা চললেও মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হলেও মানুষের মাঝে গ্রেপ্তার আতঙ্ক দেখা যায়নি।
স্থানীয় সোলায়মান আলী জানান, রাতের ঘটনার পর থেকে পুলিশ কাউকে হয়রানি করেনি। এখন পর্যন্ত কেউ আটকও নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। দোকানপাট খুলেছে।
চা-দোকানি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কাইল ওই সময় আইতোত বাড়িত আইসনোং (ছিলাম)। কোনো সমস্যা নাই। সকাল সকাল দোকান খুলছি। যার যার কাম তাই তাই করোছি।’
হারাগাছের নয়াটারীতে তাজুলের বাড়িতে গেলে তার আরেক ভাই লোটাস মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দরদী স্কুলের পূর্বপাশে তেপতি বাছিবানিয়া এলাকা থেকে পুলিশ তাকে প্রথমে আটক করে। কিছুক্ষণ পর শুনি ভাই মরি গেইচে। এই খবর সগায় (সবাই) জানবের পাইলে পুলিশ লাশ ছাড়ি ভ্যান নিয়ে চলি যায়। পরে মানুষ মিছিল করে।
‘রাইত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ভাইয়ের লাশ থানাত নিয়ে যায়। ওটে বৈঠক করে পরে আমরা চলি আসি৷ আমার ছোট ভাই একটা মামলাত সাইন করে।’
হারাগাছ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম ফিরোজ জানান, তাজুলের নামে কাউনিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা আছে। তার নামে ওয়ারেন্ট ছিল। কয়েক মাস আগেও তাকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে।
মহানগর পুলিশের সহকারী উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘পুলিশি নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়নি। এটা প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানেন। পুলিশের কাছে খবর ছিল তাজুলের কাছে মাদক আছে। মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ তার কাছে গেলে তিনি দৌড় দেন। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।
‘তাজুলের কাছ থেকে তিন পোঁটলা হেরোইন পাওয়া গেছে। আমরা মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ সবাই জানতে পারবেন।’