বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মোগল আমলের মসজিদে লতাগুল্মের রাজত্ব

  •    
  • ২ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:১১

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বগুড়ার আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. নাহিদ বলেন, ‘সম্প্রতি মসজিদটি আমরা পরিদর্শন করেছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে মসজিদটি মোগল আমলের একটি ভিত্তি। এটি প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সংস্কারযোগ্য। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।’

ইতিহাসবিজড়িত নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা। তেমনই একটি নিয়ামতপুর উপজেলার ধরমপুর গ্রামের মোগল আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। অযত্ন-অবহেলায় কালের এই সাক্ষীকে জেঁকে ধরেছে লতাগুল্ম।

মসজিদটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ধ্বংসপ্রায় কিছু অবকাঠামো ছাড়া তেমন কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবে দেয়ালের পরতে পরতে জানান দিচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যের ছাপ। নান্দনিক নকশা ও নিপুণ নির্মাণশৈলী মনে করিয়ে দেয় মুসলিম ইতিহাসের নান্দনিকতা ও রুচিশীলতা।

নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫৩ কিলোমিটার দূরে নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ধরমপুর গ্রামে অবস্থিত ধরমপুর মসজিদ। স্থাপত্যকলা, শিল্প-সৌন্দর্যের আধার ধরমপুরে এ মসজিদ ঠিক কত বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল, এর সঠিক কোনো তথ্য জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, পাশে বিশাল পুকুরটিকে কেন্দ্র করে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

মসজিদটি নির্মাণ সময়ের মানুষের বংশপরম্পরাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সেখানকার মানুষ মসজিদটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন কি না সে তথ্যও জানা নেই কারোর।

স্থানীয়রা বলছেন, মসজিদটি ২০ বছর আগেও অনেক সুন্দর ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন প্রাচীন মসজিদটি দেখতে।

ধরমপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী প্রবীণ বাসিন্দা মাজেদ আলীর সঙ্গে কথা হয় মসজিদটি নিয়ে। তিনি বলেন, এখানে দুই ঈদের নামাজ হতো। শেষ ঈদের নামাজ হয় ২০০০ সালে। পূর্ব পুরুষদের কাছে তারা শুনেছেন, ১৯২০ সালে বড় ধরনের ভূমিকম্পে ৯টি গম্বুজসহ মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে যায়। তারপর থেকেই অনেকের কাছে এটি ‘ভাঙা মসজিদ’ নামেও পরিচিতি পায়।

মাজেদ জানান, মসজিদটির একটি দরজার ওপর কষ্টি পাথরে খোদাই করে আরবি ভাষায় কোরআনের আয়াত লেখা ছিল। সেটি ৩০-৩৫ বছর আগে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ বারবার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানানো হলেও পুরাকীর্তি হিসেবে মসজিদটি রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার মসজিদটি পরিদর্শন করা হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। খুব দ্রুত মসজিদটি সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।

মসজিদটির গঠন পদ্ধতি এবং স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও অনন্য। ৯ গম্বুজবিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদটির ভেতরে রয়েছে চারটি সুদৃঢ় খিলান। দরজা রয়েছে মাত্র একটি। দ্বিতল ভবনের ভেতরে মেহরাব ও দেয়ালে আঁকা রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানি ও ফুল।

দেয়ালের গাঁথুনি চার ফুট প্রস্থ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা। প্রাচীন স্থাপত্যকলার সুদৃশ্য মসজিদটির চিকন ইট, চুন-সুরকি নির্মিত দেয়ালে এখনও নকশা করা কারুকাজ রয়েছে। চারটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে ৯ গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণশৈলী এক কথায় মনোমুগ্ধকর।

তবে এর আয়তনের সঠিক তথ্য জানা যায়নি। মসজিদটির সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলা চত্বর ও মূল ভবন বা নামাজঘর তিনটি অংশে বিভক্ত। বিভিন্ন তথ্য মিলিয়ে মসজিদটির সম্ভাব্য বয়স প্রায় ৪০০ বছর। আর ওই সময়টা ছিল মোগল আমল।

তবে অযত্ন-অবহেলায় ঐতিহ্য ও গর্বের এই মসজিদ ধীরে ধীরে ধ্বংস হচ্ছে আশির দশক থেকে। দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। নামাজ পড়ার অনুপযুক্ত হওয়ায় পাশেই এলাকাবাসীর উদ্যোগে আরও একটি মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে।

স্থানীয় ভাবিচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাদেক আলী বলেন, ‘আশির দশকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ঢাকা থেকে নিয়ামতপুরে আসেন। সে সময় তিনি মসজিদটি পরিদর্শন করেছিলেন। এটি মোগল আমলের মসজিদ বলে সে সময় আমাকে নিশ্চিত করেছিলেন তিনি।

‘নওগাঁ জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মোগল আমলে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সরকার এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়া উচিত। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। না হলে যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি আমরা।’

মসজিদটির বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বগুড়ার আঞ্চলিক পরিচালক মোছা. নাহিদ সুলতানার সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মসজিদটি আমরা পরিদর্শন করেছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে মসজিদটি মোগল আমলের একটি ভিত্তি। এটি প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সংস্কারযোগ্য। বিষয়টি নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।’

এ বিভাগের আরো খবর