চার বছর ধরে বন্ধ থাকা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল আগামী জানুয়ারিতেই চালু করার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করা আলিফ গ্রুপ।
কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমোদন পাওয়ার পর সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এসে এই ঘোষণা দেয় আলিফ গ্রুপ।
কর্মকর্তারা বলেন, আগামী জানুয়ারিতেই চালু করা সম্ভব হবে সিঅ্যান্ডএ। যদিও তা চালু করার ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে গ্যাস সংযোগকে।
সোমবার গুলশানের একটি হোটেলে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল মিলসের অধিগ্রহণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আলিফ গ্রুপ।
আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানিটি যেহেতু চট্টগ্রামকেন্দ্রিক, তাই গ্যাস সংযোগ নিতে হবে কর্ণফুলী গ্যাস ফিল্ড থেকে। …আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে দায়দেনা পরিশোধের পর কোম্পানির যন্ত্রপাতি বিএমআরআই বা আধুনিকায়ন করে উৎপাদনের জন্য তৈরি করা হবে। এ জন্য দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে গ্যাস সংযোগ পাওয়া গেলে আগামী জানুয়ারি থেকে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে।’
আলিফ গ্রুপের দুটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এর একটি আলিফ ম্যানুফেকচারিং ও অপরটি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
দুটি কোম্পানি আলিফ গ্রুপ অধিগ্রহণ করে পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ওসিটি থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছে সজীব নিটওয়্যার অ্যান্ড গার্মেন্টসকে। আর সিএমসি কামালকে কিনে নিয়েছে তারা।
পুঁজিবাজারে বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানি পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলে হাত দিচ্ছে আলিফ গ্রুপ।
কেন সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণ করতে চাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আলিফ গ্রুপ যে পণ্য উৎপাদন করে, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলেও সমজাতীয় পণ্য উৎপাদন হতো।
‘তারা যে সুতা কিনত, সেটি আমাদের কাছ থেকেই ক্রয় করত। তারা মূলত সুতা থেকে কাপড় উৎপাদন করত। একই সঙ্গে ডাইং ও ফিনিশিংয়ের কাজও হতো কোম্পানিটিতে। ফলে আমাদের এ সেক্টরের অভিজ্ঞতা আছে।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিঅ্যান্ডএর ২৫০ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ আছে। ব্যাংক বহির্ভূত আরও প্রায় ২২ কোটি টাকা দেনা আছে।
এই টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে জানতে চাইলে আলিফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। মূল ঋণটি রিশিডিউল করে পরিশোধ করা এবং সুদ মওকুফের জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।’
কোম্পানিটি নতুন করে চালু করতে প্রায় ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলেও জানানো হয়। বলা হয়, এর জন্য একটি ‘মানি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট’ খোলা হবে।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ২১৬ শতাংশ জমিও আছে। কিন্তু এ জমি এক জায়গায় নেই। ফলে কোম্পানিটি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হবে। তাই কোম্পানিটির মূল ভবনের আশপাশে নতুন করে জমি কিনে সম্প্রসারণের উদ্যোগের কথাও জানান আজিমুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের মোট শেয়ারের মাত্র ৭.১ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। বাকি ৯২ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে।
যদিও ডিএসই ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে মোট শেয়ারের ২২.১৪ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। আর ৬২.১০ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
লিগ্যাসি ফুটওয়ার ও বিডি ওয়েল্ডিং অধিগ্রহণের জন্য পিএসই বা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছিল আলিফ গ্রুপ। এমন ঘোষণার পর কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত কোম্পানি দুটি অধিগ্রহণ করা হয়নি। সিঅ্যান্ডএর ক্ষেত্রে এমন কিছু হবে কি না- এমন প্রশ্ন ছিল আলিফের এমডির কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘যে দুটি কোম্পানির কথা বলা হচ্ছে, সে দুটির ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর এগিয়ে ছিলাম। ফলে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পাওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।’
সিঅ্যান্ডএর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পাওয়া গেছে বলেই সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা জানান আলিফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
২০০১ সালে মাত্র ৫ লাখ টাকা মূলধনের কোম্পানি ছিল সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। এরপর ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বরে ৯ লাখ ৯২ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু ও প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হয় ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
২০১৫ সালে থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ শেষে একই সালের ২১ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে।
মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর আবারও নতুন শেয়ার ছেড়ে ১২০ কোটি টাকার বেশি মূলধন বাড়ানো হয়। এরপর বিএসইসির কাছে কোম্পানিটির আইপিও আবেদন জমা দেয়া হয়।
অর্থাৎ আইপিও আবেদনের আগের দুই মাসে ৫ লাখ টাকার কোম্পানিটি হয়ে যায় ১৩০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি। আইপিওর ৪৫ কোটি টাকা যোগ হওয়ার পর সেটি হয়ে যায় ১৭৫ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি।
তালিকাভুক্তির পর তিন বছরে যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানির মূলধন দাঁড়ায় ২৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
শেয়ার লেনদেন শুরুর ২৭ মাস পর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১ মে হঠাৎ উৎপাদন বন্ধ করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানির কারখানা সংস্কার করার কথা বলে উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর আর উৎপাদনে ফেরেনি কোম্পানিটি।
চার বছর ধরে বন্ধ কোম্পানিটির শেয়ার দর গত বছর দুই টাকার নিচে নেমে আসে। তবে কোম্পানিটিতে প্রাণ ফেরাতে বিএসইসির পর্ষদ পুনর্গঠনের পর শেয়ার দর ক্রমে বাড়তে থাকে। সোমবার কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ১০ পয়সা।
গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন দর ছিল ১ টাকা ৮০ পয়সা ও সর্বোচ্চ দর ৯ টাকা ২০ পয়সা।