বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এবার অস্বস্তি লেনদেনে, ৪ মাসের সর্বনিম্ন

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:৪৭

দিনশেষে ১৩৩টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২০৫টির দর। আর লেনদেন নেমে এসেছে গত ৭ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে। সেদিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। প্রায় চার মাস পর লেনদেন দাঁড়াল ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

দিনভর উঠানামা করে প্রধান সূচকের সামান্য পতনে পুঁজিবাজারের লেনদেন তলানিতে নেমেছে। প্রায় চার মাসের সর্বনিম্ন লেনদেনে এটা স্পষ্ট যে, নতুন বিনিয়োগ না করে অপেক্ষায় আছে বিনিয়োগকারীরা।

সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধনে শতাধিক কোম্পানির শেয়ারদর ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাওয়ার কারণে এমনিতেই বহু বিনিয়োগকারীর টাকা আটকে গেছে। তার ওপর জুনে অর্থবছর শেষ হওয়া অনেকগুলো কোম্পানির লভ্যাংশ না দেয়া, বেশ কিছু কোম্পানির লভ্যাংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশার ছাপ পুঁজিবাজারে স্পষ্ট।

গত সপ্তাহের শেষ তিন কর্মদিবসে টানা সূচক বৃদ্ধিতে সংশোধন অবসানের যে আশা করা হচ্ছিল, তা যে আপাতত হয়নি, তা রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসেই স্পষ্ট।

৬১.৪১ পয়েন্ট সূচক পড়ার পর সোমবার একবার সূচক বাড়ে তো একবার কমে। দিনশেষে ২.৯ পয়েন্ট কমে সূচক আবার সাত হাজারের নিচে নেমে আসে।

দিনভর সূচকের উঠানামা ছিল মঙ্গলবার

গত ৩০ মে ১০ বছরের মধ্যে সূচক প্রথমবারের মতো ছয় হাজার পয়েন্ট ছোঁয়ার পর এক মাস ধরে যে ‘ছয় হাজারের লড়াই’ চলেছিল, এবার তা ‘সাত হাজারের লড়াইয়ে’ পরিণত হলো কি না, তা নিয়ে জিজ্ঞাসা আছে।

দিনশেষে ১৩৩টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২০৫টির দর। আর লেনদেন নেমে এসেছে গত ৭ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে।

সেদিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ২৬৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। প্রায় চার মাস পর লেনদেন দাঁড়াল ১ হাজার ২৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

সূচকের বড় পতন ঠেকিয়েছে এই ১০টি কোম্পানি

দুইশ কোম্পানির পতনের মধ্যেও ওয়ালটন, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, ইবিএল, ফরচুন সুজ, সোনালী পেপার, শাহজিবাজার পাওয়ার, জেএমআই সিরিঞ্জ, শেফার্ড ও মালেক স্পিনিং এর কারণে বড় দরপতন হয়নি।

এই ১০টি কোম্পানির দর বৃদ্ধিতেই সূচক বেড়েছে ২৯.৭৪ পয়েন্ট।

অন্যদিকে গ্রামীণ ফোন, আইসিবি, রবি, ব্র্যাক ব্যাংক, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, ইউনাইটেড পাওয়ার, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, আরএ কে সিরামিক, সাবমেরিন কোম্পানি ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সের দরপতনের কারণ সূচক কমেছে সবচেয়ে বেশি। এই ১০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার কারণে পড়েছে ২২.৫০ পয়েন্ট।

সূচকের পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল এই ১০টি কোম্পানি

আগের তিন কর্মদিবসের মতো আবার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বস্ত্র খাতে। বিমা খাতেও দিনটি ভালো গেছে। খাদ্য, ওষুধ ও রসায়ন, বিবিধ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা।

বিনিয়োগ এখন বস্ত্রমুখি

গত সপ্তাহের শেষ দুই দিনের মতো চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনই সব খাতকে ছাড়িয়ে বস্ত্র খাতে সবচেয়ে বেশি লেনদেনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যেও এই খাতের একাধিপত্যের বিষয়টি উঠে এসেছে।

দিনের সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির ৫টিই ছিল এই খাতের। লেনদেন হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়া বিবিধ খাতের তুলনায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা বেশি।

দিনের সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলসের শেয়ারের দর বেড়েছে ৯.৭১ শতাংশ। কোম্পানিটি লোকসান করেও শেয়ার প্রতি ৩০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার পর ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীরা।

গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বস্ত্রে আরও একটি ভালো দিন গেল

শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়া আলহাজ্ব টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৮.৪৪ শতাংশ। শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণায় এক দিনে ৬৭ শতাংশ দাম বেড়ে যাওয়ার পরদিনও প্রায় ১০ শতাংশ দাম বাড়া হামিদ ফেব্রিক্সের দর আরও বেড়েছে ৮.০৩ শতাংশ। শেয়ারে ২৫ পয়সা এবং প্রতি ২০০ শেয়ারে ৫টি বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দর বেড়েছে ৭.৫৫ শতাংশ।

লোকসান থেকে বের হয়ে এসে লভ্যাংশ ঘোষণা করা সাফকো স্পিনিংয়েও শেয়ারদর ২৩ শতাংশ বাড়ার পরদিন বেড়েছে আরও ৭.৩২ শতাংশ।

বিমারও ভালো দিন

আগের দিন ঢালাও পতন হলেও খাতটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই খাতের ১৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার বিপরীতে বেড়েছে ৩১টি কোম্পানির দর। লেনদেন হয়েছে ১২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

আগের দিন ৭টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমে ৪৪টির দর। সেদিন লেনদেন হয় ১১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ সার্বিকভাবে লেনদেন কমলেও বিমা খাতে আগ্রহ বেড়েছে।

এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের দর, ৫.৮৬ শতাংশ। রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৩.৩৯ শতাংশ। নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৩.১৫ শতাংশ।

ব্যাংক-আর্থিক খাতে পতন

গত দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক দেখা গেলেও সেই আগ্রহে ভাটা দেখা গেছে। এই খাতের ৩২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে কেবল ৩টির, কমেছে ২২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৭টির দর। লেনদেন হয়েছে ১২৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের কর্মদিবসে লেনদেন ছিল ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তবে বরাবরের মতোই দর বৃদ্ধি ও কমার হার খুব একটা বেশি নয়। সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া ইবিএলের বেড়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা। অন্য দুই কোম্পানি ব্যাংক এশিয়ার ডাচ্-বাংলার শেয়ারদর বেড়েছে ১০ পয়সা করে।

অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দর হারানো ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারদর কমেছে এক টাকা, আল আরাফাহ ও পূবালী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৫০ পয়সা, ৪০ পয়সা করে কমেছে এবি ও এনআরবিসির দর। বাকিগুলোর দর কমেছে ১০ থেকে তিন পয়সা।

ব্যাংকের চেয়ে বেশি পতন হয়েছে আরও বেশি। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকিগুলোর মধ্যে কেবল বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ারদর বেড়েছে ৮০ পয়সা। দুটির দর ছিল অপরিবর্তিত, কমেছে বাকি ১৯টিরই দর।

সবচেয়ে বেশি পতন হওয়া মাইডাস ফাইন্যান্স এই খাতেরই কোম্পানি, যার দর কমেছে ৮.৩৭ শতাংশ। এছাড়া বে লিজিংয়ের দর ৩.৯০ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের দর ৩.৫৭ শতাংশ, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের দর কমেছে ৩.৩৬ শতাংশ।

চার খাতে মিশ্র প্রবণতা

ওষুধ ও রসায়ন খাতের একটি কোম্পানির শেয়ারদরে লেনদেন বন্ধ। বাকিগুলোর মধ্যে ১৫টির দাম বেড়েছে, কমেছেও সমান সংখ্যক কোম্পানির। লেনদেন হয়েছে ১৪০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

দিনের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড বিবিধ খাতে থাকার সুবাদে এই খাতটি লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। হাতবদল হয়েছে মোট ১৪৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ১৪১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

এই খাতের ১৪টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ৬টির দর, কমেছে ৭টির, একটির দর পাল্টায়নি।

আর্থিক, সিমেন্ট ও জ্বালানি খাতে দরপতন চলছেই

খাদ্য খাদের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির, কমেছে ৮টির, একটির দর ছিল অপরিবর্তিত। শেয়ারে সাড়ে ১২ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার পর টানা তিন কর্মদিবস দর হারানো ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি এদিন হারানো দর থেকে ৮ টাকা ৬০ পয়সা ফিরে পেয়েছে।

খাতটিতে লেনদেন কমেছে। হাতবদল হয়েছে মোট ৪৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

তথ্য প্রযুক্তি খাতের ১১ কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ৭টির দর, কমেছে ৪টির। হাতবদল হয়েছে মোট ৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৪৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সেদিন একটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছিল ৯টির দর।

জ্বালানি-সিমেন্টে আগ্রহ কমছেই

জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ একটিও পছন্দ করেননি বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারগুলোর দর হারানো অব্যাহত আছে, পাশাপাশি কমছে লেনদেন।

এদিন এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম হারিয়েছে ১৫টি, বেড়েছে কেবল ৬টি আর অপরিবর্তিত ছিল ২টির দাম। লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৯৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

গত মাসে হঠাৎ করে চাঙা হয়ে উঠা সিমেন্ট খাত এই মাসে এসে দর হারাচ্ছে। সেই সঙ্গে কমছে লেনদেন। এক দিনে প্রায় তিনশ কোটি টাকারও হাতবদল হওয়া খাতটিতে আজ লেনদেন হয়েছে ৩৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা মাত্র। আগের দিন লেনদেন ছিল ৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

সাতটি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২টির, কমেছে ৫টি।

একই প্রবণতা প্রকৌশল খাতেও। এই খাতেও লেনদেন কমছে, দর হারাচ্ছে কোম্পানির শেয়ার। আজ হাতবদল হয়েছে ৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

বেড়েছে ১৩টি কোম্পানির শেয়ারদর। বিপরীতে কমেছে ২৮টির, একটির দর পাল্টায়নি।

আর দারুণ লভ্যাংশ ঘোষণার পর ঘুমিয়ে যাওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত আড়মোড়া ভাঙতেই পারছে না। এই খাতে মাত্র ৪টির দর বাড়ার বিপরীতে কমে গেছে ১৪টির দর। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২০ লাখ টাকা।

আগের দিন লেনদেন ছিল ১৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২ দশমিক ৯০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৯৮ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৫ দশমিক ১০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬২৫ পয়েন্টে।

লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর